হামাস ও হিজবুল্লাহ'র শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যার জবাবে পহেলা অক্টোবর প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক মিসাইলের মাধ্যমে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। এরপরই তেহরানে পাল্টা আক্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তেল আবিব। টার্গেট হিসেবে দেশটির জ্বালানি স্থাপনা কিংবা পরমাণু কেন্দ্রকে বেছে নেয়া হবে কী না তা নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের দেন-দরবার চলছিলো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে। এবার জানা গেল হামলার সম্ভাব্য দিনক্ষণ।
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই ইরানে হামলা চালাতে পারে ইসরাইল। সিএনএনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র কিংবা জ্বালানি স্থাপনা নয়, হামলা করা হবে সামরিক স্থাপনায়।
এদিকে মার্কিন বিরোধিতা উপেক্ষা করেই লেবাননে আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। বুধবার দিনভর বিমান হামলায় দেশটিতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৭ জন। যার মধ্যে দক্ষিণে নাবাতিহেতে শহরের মেয়রসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। এছাড়াও আবারও ইসরাইলি হামলায় আহত জাতিসংঘের বেশকয়েকজন শান্তিরক্ষী। লেবাননে দায়িত্বরত ইউনিফিলের সদস্যরা জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু'টি ওয়াচ টাওয়ার। বেসামরিক স্থাপনায় হামলার বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ম্যাথু মিলার বলেন, 'আমি জানি না, তাদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিলে। কিন্তু পুরো গ্রাম ধ্বংস করা কিংবা বেসামরিক স্থাপনা, সাধারণ মানুষের বাড়িতে হামলা চাই না আমরা।'
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে বলেন, 'বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরাইলকে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে। প্রথম থেকেই এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। কিন্তু হিজবুল্লাহকে নির্মূলের জন্য তারা এই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও ইসরাইল সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাবো।'
যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকে তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। দুই হাজার ৩০০ এরও বেশি মানুষকে হত্যার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১২ লাখের বেশি বাসিন্দা। তবুও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহকে নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, 'ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ করবো। অর্থাৎ সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে সরিয়ে তাদের নির্মূল করতে হবে। আলোচনা হতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ থামবে না।'
লেবাননের পাশাপাশি গাজাতেও আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বুধবার দিনভর হামলায় উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ ফিলিস্তিনি। যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক সহায়তা জোরদারের নির্দেশ দিলেও বুধবার মাত্রটি ৫০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে উপত্যকায়। তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রয়োজন দৈনিক সাড়ে ৩০০ ট্রাক সহায়তা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে তেল আবিবকে। তবে ইসরাইল বলছে, হামাসের উপস্থিতি থাকা অবস্থায় পুরো উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব নয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, 'আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে গাজায় সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রাখবে ইসরাইল। তবে আমরা কখনোই পুরো উপত্যকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পারবো না, যতক্ষণ হামাস গাজার ক্ষমতায় থাকবে।'
জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, 'গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে হবে। টীকা প্রদান ও সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। উত্তর গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নীতি থেকে সরে আসতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় আসবে ইসরাইল।'
এদিকে হামাস জানিয়েছে, গাজায় সংকট নিরসনের আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধ করা সম্ভব নয়।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেন, 'পরিস্থিতি এখন খুবই জটিল হয়ে গেছে। দু'টি ফ্রন্টে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর ততক্ষণ সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না আসল সমস্যা অর্থাৎ গাজা সংকট নিরসন হচ্ছে না।'
এদিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দু'টি স্থানে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আস্তানায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ধ্বংস হয়েছে পাঁচটি অস্ত্র গুদাম। হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বি টু স্টেলথ বোম্বার যুদ্ধবিমান। এদিকে সিরিয়ার বন্দর নগরী লাতাকিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।