তবে কি ২০১৮ সালের ভেস্তে যাওয়া চুক্তি আবারও পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে? ইরান কি পাচ্ছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি? বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব কি সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না?
নানা মহলে এসব প্রশ্নের উত্থান হলেও জবাবের জন্য করতে হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষা। প্রথম দফায় ওমানে ও দ্বিতীয় দফায় রোমে বৈঠক হয়েছে। শনিবারের এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জানান, গঠনমূলক এই আলোচনা সামনে এগিয়ে নিতে চায় তেহরান ও ওয়াশিংটন। সম্ভাবনা রয়েছে চুক্তিরও। আরাগচি জানান, প্রকৌশলীদের বৈঠক হবে ওমানে আগামী ২৬ এপ্রিল।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, 'গঠনমূলক পরিবেশে আলোচনা হলো। আমার মনে হয়, দুই পক্ষই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক বেশি আশাবাদী, সেই কথাও বলবো না। সাবধান থাকতে হবে। মধ্যপন্থায় হাঁটতে হবে, শান্ত থাকতে হবে। গুজবে কান না দেয়াই ভালো। যা হচ্ছে তা আলোচনার টেবিলেই থাকছে। আলোচনা শেষ হলে ফলাফল নিজের চোখেই দেখবেন। আগামী সপ্তাহের বৈঠকের পর পরমাণু চুক্তি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলা যাবে।'
একই মন্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আলোচনার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইরানের পরমাণু আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত বিলিওনিয়ার স্টিভ উইটকফ। পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ট্রাম্পের নানা মিশনে পাঠানো হয় তাকে। ৪ ঘণ্টার এই বৈঠকে মধ্যস্থতায় ছিলেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল বুসাইদি।
এর আগে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখতে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তি হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ওপর দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। ট্রাম্পের দাবি ছিল, এই চুক্তি ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখতে কোন কাজে আসেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম দফায় কোন জটিলতা ছাড়া সরাসরি বৈঠক হলেও দ্বিতীয় দফার বৈঠকটা বেশ জটিল ছিল। এখন নানা কারণে দুই পক্ষই চুক্তিতে আসতে মরিয়া।
সাবেক ইরানি কূটনীতিক ও বিশ্লেষক মেহেরদাদ খোনসারি বলেন, 'মনে হয় না এই সপ্তাহেও কিছু হবে। সপ্তাহ শেষেই জানতে পারবো টানেলের ওই পাশে আলো আছে কিনা। কিন্তু যদি কোন কারণে পরমাণু চুক্তি না হয়, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র আর অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্র হামলা করবে। পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইরানের অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালের চুক্তির চেয়ে আরও ভালো কিছু আশা করছে তেহরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কথা দিয়ে কথা রাখে না।'
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব বরাবরই দাবি করে আসছে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে তেহরান। যদিও তা অস্বীকার করে ইরান বলছে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার দাবি, পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে খুব বেশি দূরে নয় ইরান। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির দাবি, পশ্চিম এশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত গড়ে তোলার পথে একমাত্র বাঁধা ইসরাইল।