গাজায় আগ্রাসন ঘিরে ইসরাইলের ওপর এমনিতেই ক্ষিপ্ত ইরান। তবে সরাসরি এর জবাব না দিলেও তেহরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যুক্ত হয়েছে লড়াইয়ে। যা ইসরাইলসহ তাদের মিত্র দেশগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ। এমনকি বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতিতেও পড়ছে ক্ষতিকর প্রভাব।
মধ্যপ্রাচ্যে এমন উত্তেজনার মধ্যেই এবার ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠেছে। ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। কারণ সম্প্রতি সিরিয়ায় থাকা ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলায় ১৩জন নিহতের ঘটনায় প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। সেই সূত্র ধরে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে যুদ্ধের সম্ভাব্য সময় এবং লক্ষ্যবস্তুর নাম প্রকাশ করেছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। অন্যদিকে, প্রস্তুত হচ্ছে ইসরাইলও। আর সম্ভাব্য যুদ্ধে ইরানেরও চ্যালেঞ্জ কম না। কারণ তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা কোনো দিক দিয়ে দুর্বল নয়। যে কোন হামলার জবাব দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের।
এ অবস্থায় সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে কে কার থেকে এগিয়ে আছে, তা নিয়ে বাড়ছে কৌতুহল। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের পরিসংখ্যান তথ্য বলছে, সামরিক সক্ষমতায় ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম, যেখানে ইসরাইলের অবস্থান ১৭তম। কারণ নিয়মিত ও রির্জাভ সেনা দিয়ে ইরানের থেকে পিছিয়ে আছে ইসরাইল।
ইরানের আধাসামরিক বাহিনীও ইসরাইল থেকে শক্তিশালী। এমনকি ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছে তেহরান। বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও হামলায় ব্যবহার করা যায়, এমন ড্রোন সক্ষমতাও বাড়িয়েছে দেশটি। তবে সামরিক উড়োজাহাজ, যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টারের দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে ইরান।
এদিকে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে তাদের সবচেয়ে বড় মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইসরাইলকে অস্ত্র দিচ্ছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়া। তবে আশার কথা হলো দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, স্পেন ও বেলজিয়াম। এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে ইউরোপের আরেক দেশ ডেনমার্কও।
শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বাধে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বিষয়টি বিপজ্জনক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যেমনটা ঘটেছিল ১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত সংঘাতের সময়। আর বর্তমান ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার পথে হাঁটে, তাহলে বিশ্বে দৈনিক তেল সরবরাহ কমে যাবে এক-পঞ্চমাংশ। যা অন্য কোনো মাধ্যমে জোগান দেয়া অসম্ভব। এতে বৈশ্বিক তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে দেশে দেশে মন্দা ও মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কাও বাড়ছে।