
আসাদের ‘কসাইখানা’ থেকে মুক্ত হচ্ছেন নির্যাতিত সিরীয়রা
স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর বিদ্রোহীরা সিরিয়ার কারাগারগুলো খুলে দিয়েছেন। এসব কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দি থাকা হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে আসছে আসাদের কসাইখানা হিসেবে পরিচিত সেদনায়া কারাগারসহ বেশ কয়েকটি কারাগারে বন্দিদের নির্মম নির্যাতন আর হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও কারাগারের নিচে রয়েছেন অনেক বন্দি। কারাগারগুলোতে জীবিত মানুষ খুঁজছে সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

সিরিয়ায় নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার তোড়জোড়
আসাদ পরবর্তী সিরিয়ায় চলছে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার তোড়জোড়। বিদ্রোহী এইচটিস অন্তর্ভুক্ত বিরোধী জোটকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা। রাশিয়ায় আশ্রিত আসাদের কাছেও গেছে প্রস্তাব। অন্যদিকে আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। সিরিয়ায় একদিনে শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি। এদিকে, অস্থিরতার সুযোগে আইএস মাথাচাড়া দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য।

রাশিয়া-ইরান দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই সিরিয়ায় আসাদের পতন
রাশিয়া-ইরান দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন- যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবিতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সিরিয়ায় থাকা ইরানি রাষ্ট্রদূত। বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে মার্কিন মিত্র ইসরাইল বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এ অবস্থায় সিরিয়া সরকার পিছু হটায় মিত্রদের পক্ষ থেকে জোরালো ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা সুসংহত হওয়ায় লাভবান ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র!
আসাদের পতন ইরানের আঞ্চলিক শক্তিতে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আঘাত। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা আধিপত্য বিরোধীরা। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা আরও সুসংহত হলো বলে লাভবান হয়েছে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র। তবে একইসঙ্গে এটি ইসরাইলের জন্য বড় হুমকিরও কারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় ঐতিহাসিক পরিবর্তনে সুসময় যেমন ফিরতে পারে, তেমনি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে পুরো অঞ্চলকে। বিশেষ করে আসাদের পতন ঘটানো বিদ্রোহীদের অনেকেরই যেখানে অতীত ইতিহাস সুখকর নয়, বরং ভয়াবহ।

ক্ষমতার লোভে বুঁদ হয়ে ছিলেন বাশার আল-আসাদ
প্রেসিডেন্ট বাবা হাফিজ আল-আসাদের সংস্পর্শে থেকে ক্ষমতার লোভে বুঁদ হয়ে ছিলেন বাশার আল-আসাদও। ২৯ বছর দেশের ক্ষমতা ধরে রাখা বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন বাশার। বিরোধী মত দমনের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের পর জনগণের কাছে ধীরে ধীরে স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ২০১১ সালে যা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। অবশেষে আসাদ সরকার বিরোধী হায়াত তাহরির আল শামের বিদ্রোহীদের টানা ১২ দিনের শহর দখল অভিযানে আল-আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনামলের অবসান হলো।

সিরিয়ার চতুর্থ শহর দারা দখলে নিলো বিদ্রোহীরা
ইদলিব, আলেপ্পো ও হামার পর চতুর্থ শহর দারা দখলে নিলো বিদ্রোহীরা। পাশাপাশি হায়াত তাহরির আল শাম প্রবেশ করেছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর হোমসে। প্রাণে বাঁচতে চাইলে আসাদের দল ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার হুমকি দিয়েছে বিদ্রোহীরা। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের আশা, কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই সিরিয়াজুড়ে চলবে বিদ্রোহীদের অভিযান। তবে বাশার সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
সিরিয়ায় নতুন করে চলমান গৃহযুদ্ধে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। এরইমধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো হাজার হাজার বাসিন্দা খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় সিরিয়ায় থাকা সব মানবিক সংস্থায় অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সহায়তা সংস্থা ডব্লিউএফপি।

এবার সিরিয়ার হামা শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা
আলেপ্পোর পর এবার সিরিয়ার আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর উত্তরাঞ্চলীয় হামা দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এতে, আসাদ সরকারের পাশাপাশি কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে মিত্ররাষ্ট্র ইরান আর রাশিয়ার। হামার পর এবার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরেক শহর হোমস দখলের পথে বিদ্রোহীরা। যদিও সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, এই দখল সাময়িক। অন্যদিকে, বিদ্রোহীগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের দাবি, হামার পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। এই ঘটনায় সিরীয়দের একাংশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও বড় সংঘাতের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন সাধারণ বাসিন্দারা।

তেল রিফাত শহরে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা বিদ্রোহীদের
তুমুল সংঘাতের মধ্যেই সিরিয়ার আলেপ্পোর তেল রিফাত শহরে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা। ধীরে ধীরে দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটিতে ফিরতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। যদিও গেল বুধবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে আসাদ বিরোধীদের সাথে সিরীয় সেনাদের সংঘাতে বিপর্যস্ত আলেপ্পোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এদিকে, চলমান এই গৃহযুদ্ধের পরিণতি প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পতন ডেকে আনতে পারে এমন আশঙ্কায় তার্তুস বন্দর থেকে গুরুত্বপূর্ণ নৌযান সরিয়ে ফেলছে রাশিয়া।

আসাদ বিরোধীদের হঠাৎ উত্থানে সংকটে সিরিয়া
বাশার আল আসাদ সরকার বিরোধী বিদ্রোহীরা ৮ বছর পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় সিরিয়ায় ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। বিদ্রোহীরা শহরের দখল নেয়ায় এক সপ্তাহ ধরে খাদ্য ও জ্বালানির অভাবে হাহাকার তৈরি হয়েছে আলেপ্পো ও ইদলিবসহ আশপাশের এলাকায়। দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েও ক্ষুধা নিবারণে একটি রুটি কিনতে পারছেন না অনেকে। জ্বালানি সংকটে পরিবহনের ভাড়া কয়েকগুণ বাড়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগও চরমে। গৃহযুদ্ধের কারণে এরচেয়েও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও নিজ ভূখণ্ড ছাড়তে চান না দামেস্কের বাসিন্দারা।

সিরিয়া ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বাকবিতণ্ডা
সিরিয়ার আলেপ্পো শহর দখলের পর হামার দখল নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বিদ্রোহীদের। সিরিয়ায় মার্কিন একটি ঘাঁটির কাছে রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা বিমান হামলা চালানোর দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, সিরিয়া ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

কী কারণে সিরিয়ায় হঠাৎ উত্থান আসাদ বিরোধীদের?
ঠিক কোন কারণে সিরিয়ায় হঠাৎ উত্থান আসাদ বিরোধীদের? প্রতিবেশী দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বিবেচনায়, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চায় আঙ্কারা। আসাদ মিত্র রাশিয়া আর ইরান সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় আসাদ বিরোধীদের সবুজ সংকেত দেয় তুরস্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহীদের দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও ব্যর্থ আসাদকে ফিরতে হবে রাজনৈতিক সমঝোতার পথেই।