মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

সিরিয়ায় ফিরছেন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা লাখো শরণার্থী

৫০ বছর আসাদ পরিবারের বর্বর স্বৈরশাসন আর ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরিয়া এখন মুক্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও স্বাধীন দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিরিয়ার লাখো শরণার্থী। লেবানন, তুরস্ক আর জর্ডান সীমান্তে ঢল নেমেছে শরণার্থীদের। গৃহযুদ্ধের সময় পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া অভিবাসীরাও আসতে চাইছেন স্বৈরশাসনমুক্ত নিজের মাতৃভূমিতে। যদিও সরকারের পতন ঘটানো হায়াত তাহরীর আল শামের নেতৃত্ব আর সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো দূর হয়নি অভিবাসীদের শঙ্কা।

আহ সিরিয়া, আল্লাহই সিরিয়াকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে যাবে। সিরিয়া আমাদের জান্নাত, ১৩ বছর এখানে ছিলাম না। এখন দেশে ফিরতে চাই, আমার দেশে ফিরতে চাই। মাতৃভূমিতে ফিরতে চাই। লেবানন

এতদিন শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বেঁচে থাকা সিরিয়ানরা এখন এভাবেই গুছিয়ে নিচ্ছেন তল্পিতল্পা। এ যেন নতুন কোনো ঠিকানায় ফেরার প্রস্তুতি। স্বৈরশাসক আসাদ সরকার দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থীরা বহু বছর পর ফিরছেন নিজ দেশে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে। লেবানন-সিরিয় সীমান্ত এখন শরণার্থীদের ঢলে পরিপূর্ণ।

বাশার আল আসাদের স্বৈরশাসন আর ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় প্রতিবেশী দেশ লেবাননে পালিয়েছিলেন ১৫ লাখ সিরীয় নাগরিক। জর্ডান আশ্রয় দিয়েছিলো ৭ লাখ সিরিয়কে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ন্যাটো সদস্যভুক্ত তুরস্ক নিজ দেশে ৩০ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছিলো, যারা পালিয়ে এসেছিল। বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর সিরিয়রা এখন ভিড় করেছেন তুরস্ক সীমান্তেও।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরতে ইয়ালা দাগি সীমান্ত খুলে দিচ্ছে তুরস্ক। সংঘাতের কারণে ২০১৩ সাল থেকে বন্ধ ছিল এই সীমান্ত। সিরিয়ার কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংঘাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এরদোয়ান প্রশাসন। তিনি বলেন, অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সংশয় না থাকলেও দেশকে নিরাপদ রাখতে সীমান্তে নজর থাকবে আঙ্কারার।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, ‘অন্য দেশের মাটি আর সার্বভৌমত্বের ওপর আমাদের নজর নেই। আমরা সীমান্তে নজর রাখবো। কারণ সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজের দেশকে বাঁচাতে হবে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, সিরিয়ায় তাদের সম্প্রসারণ কিংবা দায়েশ, কোনোটাই আমাদের প্রতিপক্ষ না। তারা বিরোধীদল। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা সিরিয়াকেই করতে হবে। শুধু সিরিয়ার মানুষ তাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, অন্য কেউ না।’

এদিকে, শুধু পার্শ্ববর্তী দেশ নয়, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর অভিবাসী হয়েও নিজের দেশ ছেড়েছেন অনেকে। ভয় - আতঙ্কে পরিবারের কাছে ফিরতে পারেননি এখনো। আসাদ সরকারের পতন আর হায়াত তাহরীর আল শামের উত্থানের পর এখন দেশে আসতে আগ্রহী অনেকেই। কয়েক বছর দেশের বাইরে থেকেও মাতৃভূমি আর পরিবারের মায়ায় আটকে রয়েছেন অনেকেই।

আসাদ সরকারের পতনের পর দেশে ফিরতে চাইছেন বিভিন্ন দেশে সিরিয়ান নাগরিকের পরিচয় লুকিয়ে রাখা অনেকেই। এমনই একজন আইরিশ সিরিয়ান লেখক সৌদ আলদারা। একটা সময় নিজের দেশ নিয়ে কথাই বলতে চাইতেন না তিনি, অথচ এখন অধৈর্য হয়ে পড়েছেন কখন পা রাখবেন নিজের দেশের মাটিতে।

কিন্তু জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া সিরিয়ানরা বলছেন, দেশ এখনও পুরোপুরি নিরাপদ কিনা, সেটি নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। ২০১৫ সালে ইরাক, সিরিয়া আর আফগানিস্তানে একযোগে সংঘাত শুরুর পর চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল জার্মানির সীমান্ত খুলে দিলে সেসময় দেশ ছেড়েছিলেন আনাস মোদামানি। এখন তিনি জার্মানির একজন চিত্রগ্রাহক। অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে এক সেলফি বদলে দিয়েছে তার জীবন।

জার্মানি সেসময় আশ্রয় দিয়েছিলো ৮ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে। যারা এখন নাগরিকত্ব পেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তারা বলছেন, দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। ইউরোপের উন্নত জীবনমানের সঙ্গে তুলনা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ফিরতে চান না অনেকেই।

গেল সপ্তাহে হঠাৎ করেই সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শামের উত্থানের পর শেষ পর্যন্ত গদি ছাড়া হয়েছেন ২৪ বছর ধরে স্বৈরশাসকের দায়িত্ব আঁকড়ে ধরে রাখা বাশার আল আসাদ। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত তৈরি করেছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের। তুরস্ক, লেবানন আর জর্ডানে থাকা লাখ লাখ শরণার্থী এখন ফিরতে পারবেন নিজ দেশে।

এএম