গল্পের সিংহ আর নেকড়ের লড়াইয়ে যেমন লাভ খোঁজে শকুন, তেমনি বিদ্রোহীদের অভিযানে সিরিয়ার কয়েক দশকের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনেও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পরিসর আর বড় করার সুযোগ লুফে নিলো যুদ্ধবাজ ইসরাইল।
রোববার ভূমধ্যসাগরীয় শহর লাটাকিয়ার বন্দরসহ সিরিয়াজুড়ে শতাধিক বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। একইসঙ্গে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা প্রবেশ করে সিরীয় ভূখণ্ডেও। হঠাৎ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও নেতৃত্বের শূন্যস্থানের সুযোগ নিয়ে উগ্রবাদীদের উত্থান ঠেকাতে এসব হামলা, দাবি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর। সিরিয়ায় অস্থিতিশীলতার সুযোগে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নতুন করে সংগঠিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররাও।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিজের অবস্থান তৈরি করছে ইসরাইল, গত কয়েক দশকে যা ঘটেনি। যারা আমাদের সহযোগিতা করবে, তারা ভীষণ লাভবান হবে। যারা আমাদের আক্রমণ করবে, তাদের বিশাল ক্ষতি হবে। আমাদের এবং সিরিয়ার জনগণ-উভয়পক্ষের জন্যই নতুন এক সিরিয়া দেখতে চাই আমরা।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘সিরিয়ার পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অস্থির। খুব ভালো হয়েছে যে আসাদ নেই। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে এরপরে নিশ্চিতভাবেই খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। রাজনৈতিকভাবে সবকিছু এগিয়ে নিতে আমাদের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা খুব জরুরি হয়ে গেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘এক ঐতিহাসিক সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি উদ্বেগজনক ঝুঁকিও বহন করে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি। সম্ভাবনার মুহূর্ত কীভাবে মুহূর্তে সংঘাত আর সহিংসতায় রূপ নিতে পারে, ইতিহাস তার প্রমাণ। নিজেদের নিরাপদ স্বর্গ গড়তে এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ নিতে পারে আইএস।’
এদিকে, আসাদ পরবর্তী সিরিয়ায় নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ১৩ বছরের বেশি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে আসাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম, তথা এইচটিএস এবং অন্যান্য বিরোধী দল নিয়ে ২০১৭ সালে গঠিত সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট, এসএসজি'র কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি দিয়েছেন পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি জালালি। বিরোধী দলীয় নেতা মুহাম্মদ আল-বশিরকে দেয়া হয়েছে নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিক বলেন, ‘সিরিয়ার মানুষের জন্য সম্ভাব্য সেরা ভবিষ্যৎ দেখতে চাই আমরা, যেখানে তারা নিজেদের অগ্রাধিকার দিতে পারবেন, নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হবেন।’
অন্যদিকে, সিরিয়ায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে সাবেক সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তার পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রী বাসাম সাবাগ। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসাদ বর্তমানে মস্কোতে আছেন বলে সোমবার নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার সিরীয় দূতাবাস, যদিও আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছে। এদিন মস্কোর সিরীয় দূতাবাস থেকে সিরিয়ার জাতীয় পতাকা নামিয়ে বিদ্রোহীদের তিন তারকা খচিত পতাকা উড়িয়েছে সেখানকার সিরীয় নাগরিকরা।
সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্ক ও অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনার কথা জানিয়েছে ক্রেমলিন। তবে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি নিয়ে নতুন শাসকগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করবে রুশ প্রশাসন।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘সিরিয়ায় রুশ সামরিক ঘাঁটির বিষয়ে কী করণীয়, সে বিষয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। যাই ঘটুক না কেন, সিরিয়ার ক্ষমতায় যারা থাকবে, তাদের সাথেই এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। চরম অস্থির আর পরিবর্তনের সময় চলছে এখন। যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের সাথে আলোচনা সময়সাপেক্ষ।’
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে ৬ ডিসেম্বর সিরিয়ার টার্টুজে রুশ নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে রণতরি দেখা গেলেও সোমবার দেখা যায় জনশূন্য এলাকা।