বিদেশে এখন
0

ক্ষমতার লোভে বুঁদ হয়ে ছিলেন বাশার আল-আসাদ

প্রেসিডেন্ট বাবা হাফিজ আল-আসাদের সংস্পর্শে থেকে ক্ষমতার লোভে বুঁদ হয়ে ছিলেন বাশার আল-আসাদও। ২৯ বছর দেশের ক্ষমতা ধরে রাখা বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন বাশার। বিরোধী মত দমনের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের পর জনগণের কাছে ধীরে ধীরে স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। ২০১১ সালে যা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। অবশেষে আসাদ সরকার বিরোধী হায়াত তাহরির আল শামের বিদ্রোহীদের টানা ১২ দিনের শহর দখল অভিযানে আল-আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনামলের অবসান হলো।

১৯৭১ সাল থেকে ২০০০। ২৯ বছর সিরিয়ার ক্ষমতার নাটাই ধরে রেখেছিলেন বাশার আল আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদ। পিতার মৃত্যুর পর উত্তরসূরি হিসেবে ২০০০ সালের ১৭ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন বাশার আল আসাদ।

সেই থেকেই সিরিয়ার নাম সামনে আসতেই অবধারিতভাবে ওঠে আসে আল-আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসন আমল। এরমধ্যে সবশেষ দুই যুগ ধরে ইস্পাতের মতো কঠিন হয়ে ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখা বাশার আল আসাদের ভাগ্য সুতায় ঝুলতে শুরু করে চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে। হায়াত তাহরির আল শামের বিদ্রোহীদের টানা ১২ দিনের অভিযানে সেই সুতা কাটা পড়ে ক্ষমতার নাটাই হাত ছাড়া হলো আসাদ পরিবারের।

১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া বাশার পড়াশোনা করেছেন চক্ষুবিজ্ঞানে। হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। বাবার পরামর্শে সামরিক বিষয়েও পড়াশোনা করেছেন। হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন করেছেন রাজনীতিতেও। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাবার সংস্পর্শে থাকতে থাকতে ক্ষমতার লোভে বুঁদ হতে থাকেন নিজেও। ১৯৯৪ সালে বড় ভাই বাসেল আল-আসাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর ৩৪ বছর বয়সে সিরিয়ার ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসা সহজ হয় বাশারের জন্য।

প্রেসিডেন্ট হয়েই তার বাবা হাফিজের সময়কার নিরাপত্তা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীতে রদবদল করেন বাশার। নিজের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসিয়ে শুরু থেকেই প্রশাসনের লাগাম নিজের হাতে রাখেন তিনি। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও বাশার পুনর্নির্বাচিত হন।

শাসনামলের শুরুর দিকে প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনীতি শক্তিশালীর পথে হাঁটতে থাকায় সিরীয়দের কাছে পছন্দের মানুষ ছিলেন তিনি। যখন বিরোধী মত দমনে তাঁর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তখন থেকেই সিরিয়ার পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। বিরোধী মত প্রকাশকারীদের গ্রেপ্তার অভিযানে ফুঁসতে থাকে মানুষ।

২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথমবারের মতো শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। বাশারের সরকারি বাহিনীর দমন–পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত বাশার আল আসাদ সরকারকে হটাতে একপর্যায়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন বিদ্রোহীরা। এরপর বাশারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সব দিক থেকে সহায়তা করে গেছে রাশিয়া এবং ইরান।

২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচন, বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে তুমুল বিতর্কিত ও সমালোচিত হন বাশার। বিদ্রোহীদের পশ্চিমা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী হিসেবে দেখতে শুরু করে বাশার সরকার ও তার মিত্ররা। সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনীর রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ উত্তেজনার পারদও বেড়ে যায়।

টানা ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর চরম অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা সিরিয়া থেকে পালালেন রাশিয়া ও ইরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাশার আল আসাদ।

ইএ