যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

রাশিয়া-ইরান দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই সিরিয়ায় আসাদের পতন

রাশিয়া-ইরান দুর্বল হয়ে পড়ার কারণেই সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন- যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবিতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সিরিয়ায় থাকা ইরানি রাষ্ট্রদূত। বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে মার্কিন মিত্র ইসরাইল বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এ অবস্থায় সিরিয়া সরকার পিছু হটায় মিত্রদের পক্ষ থেকে জোরালো ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।


রাশিয়া ও ইরানের মতো শক্তিশালী পরাশক্তিরা পাশে থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বিদ্রোহীদের আকস্মিক দাপটে মাত্র ১২ দিনের অভিযানেই দীর্ঘ দুই যুগের ক্ষমতা থেকে ছিটকে গিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পরিবারসহ রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

আসাদ সরকারের এমন আকস্মিক পতনে রাশিয়া ও ইরানের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পশ্চিমারা। মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ই দাবি করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়েছে রাশিয়া। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ক্রমাগত সফল অভিযানে ইরানেরও শক্তি কমে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাশিয়া, ইরান বা হিজবুল্লাহ কেউই সিরিয়ার ঘৃণ্য সরকারকে রক্ষা করতে পারেনি। এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আঘাতের প্রত্যক্ষ ফল। এমনকি ইসরাইল তাদের নিজেদের আত্মরক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে এগোচ্ছে।’

এ অবস্থায় আসাদবিহীন সিরিয়া ভবিষ্যতে কোন পথে হাটে তা নিয়ে শঙ্কিত রাশিয়া-ইরান। এরইমধ্যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরী। বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে ইসরাইল বিদ্রোহীদের অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরী বলেন, ‘ইসরাইল আসলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে এমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও সরঞ্জাম দিয়েছে যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের কাছেও ছিল না। তাই সিরিয়া সরকার, সেনাবাহিনী এবং জনগণ এক পর্যায়ে প্রতিরোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটে যায়। স্বাভাবিকভাবেই, যখন তারা নিজেরাই প্রতিরোধে আগ্রহী না, তখন অংশীদার এবং মিত্রদের পক্ষেও জোরালো ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয় না।’

এদিকে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার ঐতিহাসিক এই সুযোগটি কাজে লাগাতে সিরিয়ার জনগণের প্রতি আহ্বান সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের। এছাড়াও ঐক্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দেন সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত।

সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বলেন, ‘আমি সব সিরিয়ানকে সংলাপ এবং ঐক্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানাই। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত। কারণ তারা সবাই তাদের দেশ ও সমাজ পুনর্গঠন করতে চায়।’

এমন পরিস্থিতিতে আসাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসন বিদ্রোহীদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমদিনই এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি।

সিরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রে ব্যাংক বলেন, ‘এখন দু'টি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। তা হলো হায়াত তাহরির আল শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের সাথে পুরানো শাসক বাহিনীর অবস্থান। কারণ আসাদের প্রধানমন্ত্রী গাজি আল-জালালিকে মসৃণ, সহিংস-মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য কিছু উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

এই মুহূর্তে তুরস্ক, লেবানন, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশে থাকা সিরিয়ার বাস্তুচ্যুত নাগরিকেরা দেশে ফেরার চেষ্টা করলেও, অনেকেই এখনও দেশের পূর্ণ স্থিতিশীলতার প্রহর গুনছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আসাদ সরকারের পতনে সবাই খুশি হলেও, পুরোপুরিভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান নিয়ে শঙ্কা এখনও রয়ে গেলে বলে মত বিশ্লেষকদের।

এসএস