সিরিয়ায় সরকার পতনের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যে দেশটি সবচেয়ে বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেটি ইসরাইল। বাশার আল আসাদ দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে গেলো ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ার বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরাইল হামলা করেছে ৪৮০টি। সিরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা ছিল এটি। অস্ত্রের গুদাম রয়েছে দাবি করে তেল আবিব জানায়, লক্ষ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ তিন বিমানবন্দর হোমস, দামেস্ক আর কামিশলি।
একযোগে দেশটির যুদ্ধবিমান, রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র, অস্ত্র প্রস্তুতকারক কারখানা, অস্ত্রের গুদাম, ১৫টি নৌযান লক্ষ্য করে হামলা করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
আল বায়দা আর লাতাকিয়ার বন্দরগুলোতে হামলায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাহাজসহ পুরো বন্দর। নেতানিয়াহুর দাবি, এই অস্ত্র যেন সিরিয়া হয়ে হিজবুল্লাহ বা অন্য কোনো সশস্ত্র সংগঠনের হাতে যেতে না পারে, তাই এগুলো শেষ করে দিচ্ছে আইডিএফ। সিরিয়ার নেতৃত্বে ইরানের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণাঞ্চলের গোলান মরুভূমি পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, পুরো অঞ্চল প্রতিরক্ষা জোনের আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। সিরিয়ায় যেন সশস্ত্র যোদ্ধারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তাই এই এলাকা সুরক্ষিত থাকবে।
গোলান মালভূমির বাফার জোনে থাকবে ইসরাইলি সেনারা। তবে সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বলছে, দামেস্ক থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে ইসরাইলি সেনারা।
এই হামলা আতঙ্কে সিরিয়ার লাতাকিয়া আর তারতৌস সমুদ্র বন্দরের ঘাঁটি থেকে সরে যাচ্ছে রাশিয়ার নৌযান। এই দুই উপকূলীয় বন্দর শহরে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল। বাশার আল আসাদের মিত্র দেশ রাশিয়া নিজেদের সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসতে পারছে না।
কাতার বলছে, সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে ইসরাইল। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশটির সার্বভৌমত্ব নষ্ট করছে তেল আবিব। খবর এসেছে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর দামেস্ক থেকে কিছুটা দূরে বাফার জোনের পরিধি আরও বাড়িয়েছে তেল আবিব। সিরিয়াকে মানবিক সহায়তাও পাঠিয়েছে দেশটি।
এদিকে তুরস্ক আবার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পিপলস ডিফেন্স ইউনিট বা কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, একসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র আর ভারি সমরাস্ত্রে পরিপূর্ণ ১২টি ট্রাক ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
সিরিয়ার কামিশলি বিমানবন্দরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে চালানো হয় এই হামলা। গেলো তিনদিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর সিরিয়ার মানজিব শহরে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দিশ বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স, তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
সিরিয়ায় চারপাশ থেকে এতো হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ার পরিস্থিতি এখনও নড়বড়ে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনও সংঘাত চলছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শাম দেশকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখানে নিষ্ক্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরীর আল শামকে সমর্থন করে ওয়াশিংটন বলছে, কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে সিরিয়া স্থিতিশীল হয়েছে। এই সংগঠনের নাম সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়ার কথাও ভাবছে বাইডেন প্রশাসন। রয়টার্স জানিয়েছে, এইচটিএস'কে সুশাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে প্রায় অর্ধশতকের স্বৈরশাসন ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশের সাধারণ মানুষ এখনও উদযাপন করছে আসাদ সরকারের পতন। এমন অবস্থায় এইচটিএস'এর সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে মোহাম্মদ আল বশির দেশের সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন পুলিশ প্রধান ফুয়াদ আল শামি জানান, দেশে নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন তিনি। আসাদ বাহিনী পালিয়ে গেলেও নতুন করে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর এজ জোর শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।