মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধকবলিতদের ত্রাণকে 'হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল: জাতিসংঘ

গাজার উত্তরাঞ্চলে জোরেসোরে চলছে ফিলিস্তিনি নির্মূল অভিযান। ১৭ দিনের কঠোর অবরোধের মধ্য সেখানে ৬৫০ মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে উদ্ধারকাজ। যুদ্ধকবলিত মানুষের জন্য পাঠানো ত্রাণকে ইসরাইল 'হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের। অন্যদিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর আর্থিক অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। পাল্টা রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে গোষ্ঠীটিও।

প্রায় দুই বছর ধরে ৬০০ মিশন সম্পন্নের পর গ্রেপ্তার হয়েছে সাত ইহুদি নাগরিক। এর মাধ্যমে চিরশত্রু ইরানের হয়ে কাজ করা ইসরাইলি গুপ্তচরদের একটি নেটওয়ার্ক সফলভাবে ভেঙে দেয়ার দাবি গোয়েন্দাদের। অভিযোগ- ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ও জ্বালানি অবকাঠামোর তথ্য ও ছবি সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর নজরদারি করছিলেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা।

ব্রাসেলসের সামরিক বিশেষজ্ঞ এলিজেহ ম্যাগনিয়ার বলেন, 'এটা অনেক বড় অনুপ্রবেশ। কারণ এতে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে ইসরাইলের ভেতরে ইরানের গোয়েন্দা কার্যক্রম কতটা গভীরে ঢুকতে সক্ষম। কারণ দুই বছর ধরে তারা গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে গেছে, ৬০০ এরও বেশি মিশন সম্পন্ন করেছে। এর মাধ্যমে ইসরাইলি নিরাপত্তায় ত্রুটি স্পষ্ট।'

এদিকে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর আর্থিক অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। সোমবারও বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেছে শিশুসহ কয়েকজনের। রাজধানীর প্রধান সরকারি হাসপাতালের কাছে হয় এসব হামলা। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, হাসপাতালের নিচে হিজবুল্লাহর একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে লুকিয়ে রাখা আছে শত-কোটি ডলারের অর্থ-স্বর্ণ।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'একটি স্থানের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করছি। আল-সাহেল হাসপাতালের ঠিক নিচে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর বাঙ্কারে কোটি কোটি ডলারের নগদ অর্থ ও স্বর্ণ লুকোনো আছে। সেখানে আমরা হামলা করিনি। সেখানে সর্বক্ষণ নজর রেখেছে বিমান বাহিনী।'

বৈরুতে ভারি বোমাবর্ষণের টানা দ্বিতীয় রাত ছিল এটি। এর আগের রাতে হিজবুল্লাহর লেনদেনে সম্পৃক্ত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৫ দফা বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। মাসব্যাপী হামলায় বারবার আশ্রয় হারিয়ে সর্বস্বান্ত লেবাননের ১২ লাখ মানুষ। আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বছরব্যাপী অভিযানে ইসরাইলের সীমা ছাড়ানো ভয়াবহতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে গত ১৭ দিনে।

১৭ দিন ধরে গাজার উত্তরাঞ্চলকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ইসরাইলি সেনারা। কয়েকশ' মানুষকে হত্যার পাশাপাশি হতাহতদের উদ্ধার আর চিকিৎসাতেও দিচ্ছে বাধা। ধ্বংসস্তূপ পর্যন্ত তো উদ্ধারকারীদের যেতে দেয়া হচ্ছেই না। জাতিসংঘের কর্মীদেরও অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে যাওয়ার পথ আটকে রাখা হয়েছে। যুদ্ধকবলিত মানুষের অধিকারের ত্রাণকে ইসরাইল 'হাতিয়ার' হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার।

গাজা ফিল্ড হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-হামস বলেন, 'কোনো ঔষধ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইল। চিকিৎসা সরঞ্জাম ঢোকাও বন্ধ উপত্যকার উত্তরে। চিকিৎসাও বন্ধ। তার ওপর চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য হাসপাতালের ভেতরে খাবার ঢোকাও আটকে রেখেছে।'

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গাজায় অস্ত্রবিরতির আলোচনা নতুন করে শুরু করতে সপ্তাহব্যাপী মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে ইসরাইলে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন। এক বছরে এটি মধ্যপ্রাচ্যে তার ১১তম সফর।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, 'গাজায় যুদ্ধে কীভাবে ইতি টানা যায়, সকল বন্দীর মুক্তি এবং ফিলিস্তিনিদের দুঃসহ দুর্ভোগ শেষ করা যায়, এসব বিষয়ে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন ব্লিংকেন। যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা এবং ফিলিস্তিনিদের জীবন ঢেলে সাজানো আর হামাসেরমুক্ত নতুন শাসনব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা করবেন তিনি।'

গাজা-লেবানন মিলিয়ে এক বছরে কমপক্ষে ৪৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যুদ্ধের পরিসর আরও বাড়িয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতেও হামলার হুমকি দিয়েছে দেশটি। এ বিষয়ে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তেহরান।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেহি বলেন, 'কোনো দেশের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার হুমকি জাতিসংঘের ৫৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদে নিষিদ্ধ। তাই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার কাছে আমরা ক্ষোভ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আরও অনেক দূরে যেতেও প্রস্তুত আছি।'

এদিকে গাজায় অবৈধ বসতি আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন কট্টর ডানপন্থি ইসরাইলিরা। উপত্যকার সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়ে এ দাবি জানান ইসরাইলি মন্ত্রিসভার সদস্যসহ অনেকে। ৩৮ বছরের অবরোধ প্রত্যাহার করে ২০০৫ সালে অঞ্চলটি থেকে সেনাবাহিনী ও দখলদারদের সরিয়ে নিয়েছিল ইসরাইল।

এসএস