তাই জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য রাখতে যখন মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, তখনই অধিবেশন কক্ষ থেকে একে একে বেরিয়ে যান ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
শুক্রবারের (২৭ সেপ্টেম্বর) ভাষণে লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। এতে ফিকে হয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা এড়াতে বহু প্রতীক্ষিত অস্ত্রবিরতির আশা।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি এখানে এটাই বলতে এসেছি যে যথেষ্ঠ হয়েছে। আমাদের নাগরিকরা নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে ফিরে যেতে না পারা পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেবো না। আমাদের উত্তর সীমান্তে সন্ত্রাসীদের হানা আমরা সহ্য করবো না। হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পথ বেছে নিলে আমাদের হাতেও দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।'
হিংস্র শত্রুরা ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিতে চাইলেও শান্তি চায় ইসরাইল, এমন দাবিও করেন নেতানিয়াহু। দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণে দু'টি আঞ্চলিক মানচিত্র উপস্থাপন করেন তিনি, যেখানে ইসরাইলকে 'আশীর্বাদ' আর ইরান-ইরাক-সিরিয়াকে 'অভিশাপ' আখ্যা দেন। গাজা-লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সব সংকটের জন্য ইরানকে দায়ী করেন এ নেতা। বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর থেকে উঠে যাওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপেরও আহ্বান জানান তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, 'তেহরানের স্বৈরশাসকের জন্য আমার একটি বার্তা আছে। আমাদের ওপর আঘাত এলে আমরাও আঘাত করবো। এর মাঝামাঝি কিছু নেই। ইরানে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ইসরাইলের লম্বা হাত পৌঁছাবে না। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রেই এ সত্য প্রযোজ্য।'
এদিকে, নেতানিয়াহুর এ ভাষণের পরপরই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র লেবানিজ রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ'র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার লক্ষ্যে এ হামলা চালায় তেলআবিব।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'হিজবুল্লাহ'র সক্ষমতা কমাতে ইসরাইলি সেনাদের বিমান হামলার ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে কিছুক্ষণ আগে হামলা চালানো হয়েছে। দাহিয়ে এলাকার দক্ষিণের ব্যস্ত একটি এলাকায় আবাসিক ভবনের নিচে ছিল সেটি। হামলার ফল সম্পর্কে দ্রুতই আরও বিস্তারিত জানাবো আমরা।'
হিজবুল্লাহ'র আল-মানার টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, চারটি ভবন ধ্বংস হয়েছে কয়েক দফা হামলায়, হতাহত অসংখ্য মানুষ। যদিও নাসরাল্লাহ সুরক্ষিত আছে বলে দাবি গোষ্ঠীটির। দাবির সত্যতা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে ইরান-ইসরাইল দু'পক্ষই।
১৯৯২ সালে লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি হেলিকপ্টার থেকে রকেট হামলায় তৎকালীন প্রধান সৈয়দ আব্বাস আল মুসাবি নিহত হওয়ার পর থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ'র নেতৃত্বে আছেন হাসান নাসরাল্লাহ। নিরাপত্তার কারণে বরাবরই আত্মগোপনে থাকা এ নেতার জীবনের বড় অংশ ভূগর্ভস্থ বাংকারে কেটেছে বলে ধারণা করা হয়।