এশিয়া
বিদেশে এখন
0

মাত্র কয়দিন বাকি থাকলেও জমেনি কলকাতার পূজার বাজার

দুর্গাপূজার দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময় বাকি থাকলেও ভারতের কলকাতাসহ অন্যান্য শহরে জমেনি পূজার কেনাকাটা। ইতোমধ্যে বোনাস হাতে পেলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই মার্কেটে। লোকসান এড়াতে ছাড় দেয়ার কথা ভাবছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বন্যা ও আরজি কর কাণ্ডে ভাটা পড়েছে উৎসবে।

নিউমার্কেট থেকে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা চত্বর দেখে বোঝার উপায় নেই শারদীয় দুর্গাপূজার আর বেশি দিন নেই।

পূজার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কলকাতায় শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার তোড়জোড়, ক্রেতাদের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে বাজারঘাট। কিন্তু এবার শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে কোনো ব্যস্ততা নেই পশ্চিমবঙ্গবাসীর। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা পূজা উপলক্ষ্য বড় অংকের বিনিয়োগ করেন, ক্রেতা শূন্য বাজার দেখে তাদের কপালে চিন্তার ভাজ।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগামী দিন কী হবে জানি না। কারণ চারদিকে বন্যা হয়ে রয়েছে। এটা একটা বিষয়, মানুষ আগে বাঁচার চেষ্টা করবে, তারপর জামাকাপড় কেনার চিন্তা করবে।’

গেল ৯ আগস্ট নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের জেরে গেল একমাস ধরে থমথমে হয়ে আছে কলকাতার পরিবেশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সবাইকে উৎসব ও পূজার আমেজ নিয়ে কাজে ফিরতে বললেও, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছিল, নির্যাতিতা বিচার না পেলে তারা উৎসবে ফিরবেন না। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেঙ্গল শপিং ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অডিওবার্তায় আরও একবার পুজোর গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, উৎসবের বেচাকেনার সাথে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকের ভাগ্য জড়িত।

মমতা বলেন, ‘যেহেতু বর্ষায় কয়েকটা দিন ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। তাই আমি মনে করি ছোট হকার থেকে শুরু করে দোকানদার,বড় দোকানদার, যারা এইসব পুজোকে কেন্দ্র করে সারাবছরের একটা ব্যবসা করে, যেন সারাবছর তাদের ইনকামের রাস্তা অনেকটা খুলে যায়।’

যদিও, পূজার বাজারে মন্দার জন্য রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরের মতো পুঁজির একটা বড় অংশ দিয়ে পূজার মালামাল দোকানে তুললেও ক্রেতাদের আনাগোনা না থাকায় বিপাকে পড়েছে বড় বিপণি বিতানের মালিকরা। তারা বলছেন, বন্যা ও নানা চাপের কারণে পূজার বেচাকেনা এখনও সেভাবে শুরুই হয়নি।

একজন বিক্রেতা বলেন, ‘নানারকম পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক কারণে ব্যবসাটা খারাপ হয়েছে। ব্যবসা আর আগের মতো নেই।’

ক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আবার অবস্থাপন্ন ক্রেতাদের কেউ কেউ বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যের জন্যে কেনাকাটা করতে আসলেও, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে নিজেদের জন্য কিছু কিনছেন না।

একজন ক্রেতা বলেন, ‘কেনাকাটা তো করতে হবেই। আবার বাড়িতে বাচ্চা আছে। এখন তো সবারই একটা খারাপ অবস্থা যায়। তাও বাচ্চাদের খুশি করার জন্য তো কেনাকাটা করতেই হয়।’

পূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকেও অনেক পর্যটক কলকাতায় আসেন কেনাকাটা করতে। তবে ভিসা শিথিল না হওয়ায় বাংলাদেশি ক্রেতাদের সংখ্যাও আশানুরূপ নয়।

ফুটপাতের দোকানি থেকে নামিদামি শপিংমল, পূজার এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকেন সবাই। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের সংসার চলে তৈরি পোশাক, পূজার মণ্ডব সজ্জায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম ইত্যাদি বানিয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা আর জি কর-কাণ্ডের জেরে এবার সীমিত আকারে পূজা উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে অনেক ক্লাব ও পাড়ার পূজা কমিটিগুলো। তবে, এত কিছুর মধ্যেও আগামী দুই সপ্তাহে জমে উঠবে কলকাতার পূজার বাজার- এমনটাই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

এসএস