আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় অর্ধেকে নামিয়েছে বাংলাদেশ

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। বকেয়া বিল বিতর্কের মধ্যেই এ পদক্ষেপ, যদিও কারণ হিসেবে ঢাকা বলছে- শীতের মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম। সরকারি সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিতে উল্লিখিত বিদ্যুতের দাম আরও কমাতে চায় বাংলাদেশ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি একটি জ্বালানি চুক্তি করেছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের আদানি গ্রুপ। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে ২00 কোটি ডলারের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে দেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় গেলো বছর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে পৌঁছানো একটি নথি বলছে, গেলো মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে ধারণক্ষমতার ৪২ শতাংশের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে আদানির গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ১ নভেম্বর থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে একটি ইউনিট।

বাংলাদেশের সরকারি সূত্রের বরাতে সোমবার প্রকাশিত রয়টার্সের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে ক্রয়কৃত বিদ্যুতের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে শীত মৌসুমের বিদ্যুতের চাহিদা কম বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে ঢাকা। তবে, কবে থেকে আবারও স্বাভাবিক পরিমাণে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করবে, তা আদানি জানতে চাইলেও এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব দেয়নি বিপিডিবি।

গেলো আগস্টে দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরই বিদ্যুৎ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ বাংলাদেশের কাছ থেকে আদানির পাওনা বলে জানা যায়। বকেয়া বিতর্কের জেরে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেয় প্রথমে আদানিই। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের জেরে ধাপে ধাপে বকেয়া পরিশোধ করতে থাকলেও আদানির এ পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশও পরবর্তীতে আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহেই নির্দেশ দেয়।

আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখলেও বকেয়ার পরিমাণ উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিপিডিবি'র সঙ্গে আলোচনা চলছে। আদানি গ্রুপ আশা করছে, বকেয়া পরিশোধের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বাংলাদেশ।

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দেশে দেশে শত-কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকিতে থাকা আদানির দাবি, বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি ডলারে। তবে বিপিডিবি'র তথ্য অনুযায়ী আদানিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার ছিল, গেলো দু'মাসে পরিশোধ করা হয়েছে ১৮ কোটি ডলারের বেশি বকেয়া।

এদিকে, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে চুক্তিটি বাতিল না হলে চুক্তিতে উল্লিখিত বিদ্যুতের দাম আরও কমাতে চায় বাংলাদেশ, রয়টার্সকে রোববার জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাউজুল কবির খান। যদিও বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো আভাস দেয়নি বলে জানিয়েছে আদানি।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভারতের যতগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে, সেগুলোর মধ্যে আদানির বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে বেশি। গেলো জুনে শেষ হওয়া বিগত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ টাকা ধরেছে আদানি, যেখানে অন্যান্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় মূল্য ১০ টাকারও কম।

দেশের বিদ্যুৎ খাতে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নয় টাকার কম।

এসএস