ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানিকারকদের ভোগান্তি, রপ্তানি কমার শঙ্কা

স্থলবন্দরে আটকে আছে ট্রাক
স্থলবন্দরে আটকে আছে ট্রাক | ছবি: এখন টিভি
0

ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞায় বিভিন্ন স্থলবন্দরে বন্ধ রয়েছে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি। এমন অবস্থায় বেনাপোল, ভোমরা, আখাউড়া, বাংলাবন্ধাসহ বেশিরভাগ স্থলবন্দরে আটকে আছে কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রাক। হঠাৎ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা তাদের।

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও কিছু প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানির ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। এতে প্রভাব পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে। স্থলবন্দরে আটকে পড়েছে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়, যার মধ্যে শতাধিক ট্রাকে থাকে তৈরি পোশাক। যৌক্তিক কারণ ছাড়া এমন নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

ব্যবসায়ী নেতাদের একজন বলেন, ‘প্রায় ১০০ ট্রাক গার্মেন্টস পণ্য আটকা পড়ে আছে। ভারত সরকার যদি এটা বিবেচনা করলে আমদানি-রপ্তানি সচল থাকবে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, ‘রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে। কারণ এটার ওপর বাংলাদেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।’

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় আখাউড়া স্থলবন্দর। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফল, ফলের জুস, তুলা, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রীসহ নানা পণ্য রপ্তানি হয়। যার বেশিরভাগই পড়েছে ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায়।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের এক্সপোর্টগুলোতে নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমাদের বন্দরের কার্যক্রমটাকে একরকম বন্ধের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।’

অন্যান্য বন্দরের মতো বিরূপ প্রভাব পড়েছে কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দরে। গেলো দুই মাসে এই বন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৪৪ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

কুমিল্লা বিবির বাজার বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে বাণিজ্য ঘাটতি, সেটা আরো বেড়ে যাবে। সময় এসেছে এগুলো নিয়ে ভাবার।’

ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। প্রতিদিন এই বন্দর ব্যবহার করে ২০ লাখ টাকার তৈরি পোশাক, জুট, সুতা, প্লাস্টিক পণ্য, জুস ও কনফেকশনারি পণ্য রপ্তানি হতো। যা এখন অনেকাংশেই ব্যাহত হবে।

রপ্তানিকারকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যে ৮ থেকে ১০টা পণ্য তারা নিত, তার মধ্যে ৬টা পণ্যেই তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে কেবল প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য রপ্তানি হয়। ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বড় কোন প্রভাব না পড়লেও ক্ষতিরমুখে এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞার তেমন প্রভাব পড়েনি পঞ্চগড়েরর বাংলাবান্ধা ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান এসব বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া বেশিরভাগ পণ্যই নিষেধাজ্ঞার আওতা মুক্ত।

গতকাল (শনিবার, ১৭ মে) স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও কিছু প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর। এর আগে তাদের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয় ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি।

এসএইচ