দেশে এখন
0

রেলসিটি সিরাজগঞ্জ এখন ট্রেনশূন্য

একসময়ের রেলসিটিখ্যাত সিরাজগঞ্জ শহর দুই যুগের ব্যবধানে হয়ে পড়েছে রেলশূন্য। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে একটি মাত্র ট্রেন চললেও গেল ৪ আগস্ট থেকে সেটিও বন্ধ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি রেলসেবা থেকে বঞ্চিত শহরবাসী। পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে দ্রুত ট্রেনটি চালুর আশ্বাস দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এসময় ভোরের ট্রেনের বাঁশি শুনে ঘুম ভাঙতো শহরবাসীর, দিনভর ইঞ্জিনের ঝিঁকঝিঁক শব্দের সাথে হাজারও মানুষের কোলাহলে মুখর থাকতো সিরাজগঞ্জ শহর।

উত্তরের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ শহর ছিল দেশের অন্যতম নদীবন্দর। নদীবন্দর থেকে এই অঞ্চলের উৎপাদিত পাট, মসলাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য পরিবহন ও ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের জন্য ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের সাথে সিরাজগঞ্জ শহরের রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। পণ্য ওঠানামার সুবিধার্থে শহরেই গড়ে তোলা হয় সিরাজগঞ্জ বাজার, রায়পুর, সিরাজগঞ্জ ঘাট ও বাহিরগোলায় চারটি স্টেশন ও রেলইয়ার্ড।

স্বাধীনতার পরও উত্তরবঙ্গের মানুষ ট্রেনে সিরাজগঞ্জ শহরে এসে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতো। রাত-দিন মিলিয়ে চলতো অন্তত ১৪টি ট্রেন। স্টেশনগুলো ঘিরেই ছিল শহরের মানুষের জীবন জীবিকা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'রেলটা সরে গেলো যখন বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হলো। এটা উদ্বোধনের পর থেকে নতুন যে রেল সংযোগটা হলো সেটা শহর থেকে আট মাইল ভাটিতে। এর জন্য সিরাজগঞ্জ শহর রেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলো।'

স্থানীয় অন্য একজন বলেন, 'সাধারণ মানুষ মনে করেন যে একটা ঐতিহ্যবাহী শহর সিরাজগঞ্জ যা রেলসিটি হিসেবে পরিচিত। সেখানে রেল থাকবে না সেটা তো হতে পারে না।'

কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর বদলে যায় চিত্র। শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রেললাইন নির্মিত হওয়ায় ট্রেনশূন্য হয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জ শহর। ২০১৩ সালের জুনে চালু হয় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন। কিন্তু গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় সেই ট্রেনটিও। দুই মাসের বেশি সময় ধরে ট্রেনটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যে কারণে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শহরবাসী।

ভোগান্তি শিকার একজন বলেন, 'বাসমুখী হওয়ার কারণে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। এটা ব্যবসায়িক, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের জন্য একটা হুমকিস্বরূপ।'

দ্রুত ট্রেনটি চালু না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক। তবে শীঘ্রই ট্রেনটি চালুর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

আমরা সিরাজগঞ্জবাসীর সমন্বয়ক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, 'আমাদের এ আন্দোলনটা কিন্তু আমরা শুরু করেছি পুনরায় ট্রেনটি চালু করার জন্য। সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলানোর জন্য না। দেশে যেহেতু একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আপনারা যে সংস্কার করছেন এই সংস্কারের মধ্যে সিরাজগঞ্জকে প্রায়োরিটি দিয়ে সিরাজগঞ্জের ট্রেনটি যেন চলে সে বিষয়ে প্রয়োরিটি দেবেন।'

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, 'এটা আসলে বিভিন্ন ট্রেন এবং বিভিন্ন স্টেশন ভাঙচুর হওয়ার কারণে চালু করা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টায় আছি দ্রুত চালু করার।'

সিরাজগঞ্জবাসীর রেল সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রেলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি শহরবাসীর।

এসএস