যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলের পাল্টা হামলার ওপর নির্ভর বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা

ইসরাইলে প্রায় ২শ'টি মিসাইল হামলার জবাবে তেল আবিব ও তেহরানের হুঁশিয়ারি ও পাল্টা হুঁশিয়ারিতে উত্তপ্ত হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের পাল্টা হামলার ধরনের ওপর নির্ভর করছে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা। যদিও বছরব্যাপী গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরাইল ও ইরান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে ব্যাকফুটে থাকায় আপাতত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর শঙ্কা নেই বলেই মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গাজায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর আশঙ্কা ছিল মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে সংঘাত। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরাইলে ইরানের মিসাইল হামলার পর সেই আশঙ্কাও সত্যি হওয়ার পথে।

গেল জুলাইয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে রাজধানী তেহরানে অবস্থানকালে ইসরাইলের হামলায় প্রাণ হারান হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এর প্রায় দুই মাস পর তেল আবিবের হামলায় প্রাণ হারাণ হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। প্রতিরোধ অক্ষ বা অ্যাক্সিস অফ রেসিসট্যান্সের দুই মিত্রের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাপ বাড়ছিল ইরানের ওপর। এবারের মিসাইল হামলায় ইরানি জনগণ খুশি হলেও পাল্টা হামলায় ক্ষতির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে কি শুরু হতে যাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন বলছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা সম্ভবত এ দফাতেও এড়ানো যাবে। পাল্টা হামলার ক্ষেত্রে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র কিংবা জ্বালানি স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করার চিন্তা বাদ দিতে যাচ্ছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। কারণ ইসরাইলের এমন পদক্ষেপে পুরোদমে বাজতে পারে যুদ্ধের দামামা। যদিও হামলার জবাব দিতে একমত হয়েছে তেল আবিবের সব পক্ষের রাজনীতিবিদ ও সামরিক বাহিনী।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কারিমা লাচির বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদে প্রতিক্রিয়া দেখানো ইসরাইলিদের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। কারণ ততক্ষণ ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না যতক্ষণ প্রতিবেশি লেবানন, জর্ডান ও মিশরের নিরাপত্তা এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ইসরাইলের প্রয়োজন রাজনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা। যা পরিপূর্ণ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের মাধ্যমে। যদিও পুরোদমে তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধে তেল আবিবকে সমর্থন দেয়ার প্রশ্নে অনীহা রয়েছে ওয়াশিংটনের। শুধু রক্ষণ শক্তিশালী করতে ইসরাইলকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটে কূটনৈতিক অঙ্গন বাদে আর কোনো ক্ষেত্রেই ইরানের পক্ষে সমর্থন মেলেনি চীন ও রাশিয়ার।'

পুরোদমে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে প্রয়োজন অর্থনৈতিক সক্ষমতা। তবে ১২ মাসব্যাপী গাজা যুদ্ধের প্রভাবে ইসরাইল ও ইরান, দুই দেশের আর্থিক অবস্থাই নাজুক। ব্যাংক অফ ইসরাইলের পূর্বাভাস, গাজা ও লেবাননে ২০২৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেলে তেল আবিবের ব্যয় ছাড়াতে পারে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ২০২৩ সালে ইরানের জিডিপি পাঁচ শতাংশ থাকলেও আগামী দুই বছরে এই হার নেমে আসতে পারে অর্ধেকে। মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতির কারণে নিয়মিতভিত্তিতে দরপতন ঘটছে দেশটির মুদ্রা রিয়ালের।

তবে বিশ্লেষকদের দাবি, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের প্রক্সিযুদ্ধ হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর