ইহুদিবাদবিরোধী বিক্ষোভের জেরে ২৩০ কোটি ডলারের তহবিল আটকে দেয়ার পর এবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষমা চাইতে বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তহবিল স্থগিতের বিষয়ে ফেডারেল আইন মেনে চলতে ট্রাম্পের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এর জেরে এবার হার্ভার্ডের করছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে ৮০টিরও বেশি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, অনুষদ ও গবেষকের ভিসা বাতিলের পদক্ষেপও নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। দেশটির অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। যা ভালো চোখে দেখেনি ট্রাম্প প্রশাসন। এরই জেরে হুট করেই বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল আটকে দেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ফেডারেল সরকার ও নাগরিক আইন মেনে চলা এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাতিল, বিক্ষোভে মুখোশ নিষিদ্ধ, মেধাভিত্তিক নিয়োগ, ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার এবং শিক্ষক ও প্রশাসকদের ক্ষমতা হ্রাসের নির্দেশ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। যা অন্যান্য অভিজাত মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ট্রাম্পের এসব সিদ্ধান্তকে বেআইনি ও হঠকারী বলে এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কারও চাপিয়ে দেয়া নির্দেশনা মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গনজুড়ে বাড়ছে উত্তেজনা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ভীনা দুবাল বলেন, ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ট্রাম্প প্রশাসন একই বিষয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। ইহুদিবিদ্বেষ রোধে শক্তিশালী অবস্থান নেয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়। তারা ফেডারেল আইন মেনে চলছে বলে জানিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কী ঘটবে আর কী করা যাবে তা নির্ধারণ করা ফেডারেল সরকারের দায়িত্ব না।’
তহবিল স্থগিতে পর এবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে প্রতি বছর বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কোনো প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ালে এই সুবিধা বাতিলের নিয়ম আছে। এখানেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইহুদিবাদবিরোধী বিক্ষোভের জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ স্পষ্টভাবে বলেছেন তাদের অবশ্যই ফেডারেল আইন মেনে চলতে হবে। তিনি হার্ভার্ডকে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন। হার্ভার্ডের উচিত তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদিবাদবিরোধী বিক্ষোভের জন্য ক্ষমা চাওয়া। অনেক অধ্যাপকও ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণে জড়িত ছিলেন।’
শুধু হার্ভার্ড নয়, ৮০টিরও বেশি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, অনুষদ ও গবেষকের ভিসা বাতিলের পদক্ষেপও নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
সেন্টার ফর এডুকেশন পলিসির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জে গ্রিন বলেন, ‘আমার ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসন এসব বিষয়গুলো উত্থাপন করে নিজেদের পছন্দমতো একটি সমঝোতায় আসতে চাপ দিচ্ছে। এসব সম্ভাবনা উত্থাপন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও একটি যুক্তিসঙ্গত সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে।’
হোয়াইট হাউজের প্রাতিষ্ঠানিক নীতি পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ট্রাম্পের এমন উদ্যোগ এরইমধ্যে প্রভাব ফেলেছে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারণ এর ফলে আটকে গেছে বিভিন্ন গবেষণা তহবিলও।





