দেড় বছরের আগ্রাসনে নিঃস্ব ফিলিস্তিনিরা তাঁবু খাটিয়ে থাকছিলেন গাজার খান ইউনিসে, সেখানেও হামলা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর। পরবর্তী আশ্রয় কোথায়? জানেন না বারবার সহায় সম্বল হারানো এই মানুষরা।
তাঁবুতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মধ্যরাতে একটা ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়লো এই তাঁবুতে। নারীরা এখানে সন্তানদের নিয়ে ছিলেন। সবাই শহীদ হয়েছেন। এই এলাকাকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিরাপদ বলেছিল। তারাই এখানে হামলা চালালো। আমাদের জন্য নিরাপদ বলে কিছু নেই।’
অন্য একজন বলেন, ‘বিশ্ব ঘুমিয়ে আছে। প্রতিদিন শিশুরা মারা যাচ্ছে। নিরীহ মানুষ, নারীদের হত্যা করা হচ্ছে? এই শিশুরাও কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ছে? না।’
গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসনের দ্বিতীয় অস্ত্রবিরতির লক্ষ্যে আলোচনা চলছে মিশরের রাজধানী কায়রোতে। সোমবার ইসরাইলের দেয়া ৪৫ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ ও বিশ্লেষণের পর মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ ইসরাইল। হামাস নির্মূল ও গাজা থেকে সকল জিম্মির মুক্তি নিশ্চিতের আগ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে না বলে জানান গাজার উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনরত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, 'সেনারা শত্রুপক্ষকে আঘাত করে চলেছে। হামাসের আরও অনেক বড় বড় আঘাত সামলানো এখনও বাকি। আমরা তাদের বলছি জিম্মিদের ফেরত দিতে। নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করে ছাড়বো বলেও আমরা জানিয়েছি।'
গেলো জানুয়ারিতে তিন ধাপের অস্ত্রবিরতির বিষয়ে সম্মত হয় ইসরাইল ও হামাস। প্রথম ধাপে ৪২ দিনের অস্ত্রবিরতির সময় ফিলিস্তিনি বন্দি ও ইসরাইলি জিম্মি বিনিময় শেষে থমকে আছে দ্বিতীয় ধাপের প্রক্রিয়া। এখনও ৫৯ ইসরাইলি জিম্মি আছে হামাসের কাছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও জীবিত বলে ধারণা তেলআবিবের।
এদিকে হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলার পর থেকে এক মার্কিন-ইসরাইলি জিম্মির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে গোষ্ঠীটি। নিজ দেশে জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছানোয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন দুর্নীতি মামলায় বিচারাধীন নেতানিয়াহু, মত বিশ্লেষকদের। বলছেন, এ কারণেই মুখে অস্ত্রবিরতির কথা বললেও এমন প্রস্তাব দিচ্ছে ইসরাইল, যা কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয় হামাসের পক্ষে।
ইসরাইল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড্যান পেরি বলেন, ‘সমীকরণ স্পষ্ট। নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে তিনি তার সরকারকে টিকিয়ে রাখবেন যে কোনোভাবে। কিন্তু জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে তার সরকারের পতনের সম্ভাবনা প্রবল। তাই কট্টর ডানপন্থিরা যুদ্ধে ইতি টানতে চান না।’
অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ২শ' হামাস সদস্যকে উপত্যকা থেকে সরিয়ে ফেলার শর্ত বেঁধে দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে নেই হামাসের দাবি করা গাজায় স্থায়ী অস্ত্রবিরতি ও যুদ্ধে ইতি টানার কোনো উল্লেখ।
৫১ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু আর উপত্যকা গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর অনেক বিষয়ে নমনীয় হামাস বলছে, ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও অবরোধের অবসানের আগে নিরস্ত্রীকরণের মানে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বহীনতার দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।