প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি শেষে গাজাকে অবরুদ্ধ করে আবারও হামলা জোরদার করে ইসরাইলি বাহিনী। এবার ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর পাশাপাশি ইসরাইলিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে গাজার হাসপাতালগুলো। এছাড়াও, উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণের বহু শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এতকিছুর পরও সফলতার মুখ দেখছে না হামাস-ইসরাইল দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতি। তবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশর। গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক অবস্থার উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের ডাক দিয়েছে দুই দেশ। যেখানে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের।
যুদ্ধবিরতির সবশেষ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। যা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটি। ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাবে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিনিময়ে অবশিষ্ট ৮ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার কথা ছিল। তবে হামাস বলছে, তাদের নিরস্ত্র না করে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করে যুদ্ধের ইতি টানতে হবে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলিদের আগ্রাসনে গাজার ৭০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড এখন উচ্ছেদ ও বিপজ্জনক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে তীব্র সহিংসতায় বাস্তুচ্যুতের সংখ্যাও রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। এতে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটে ফিলিস্তিনিরা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘গেল ১৮ মাসের যুদ্ধে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। গেল দেড় মাস যাবত মানবিক সহায়তার ট্রাকও সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না। মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত।’
ইসরাইলিদের আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খুঁজে ফিরছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া প্রিয়জনদের। যদিও, এসব ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই তাদের কাছে।
উদ্ধারকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের কোনো সরঞ্জাম নেই। যদি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকত, তাহলে ৮০ শতাংশ জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।’
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার পরিবারের ২৭ জন সদস্যকে হারিয়েছি। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।’
উদ্ধারকারীদের মধ্যে অন্য একজন বলেন, ‘আটটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন। শত চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
এদিকে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান এহুদ বারাক। এতে আরও স্বাক্ষর করেন দেড় হাজারের বেশি বর্তমান ও সাবেক সেনাসদস্য। এছাড়া দুই শতাধিক ইসরাইলি সামরিক ডাক্তারও যুদ্ধের অবসান চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে, স্বাক্ষরকারী সব সেনাদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল সরকার।