নতুন বছর আসলে সশরীরে না হলেও ভার্চুয়ালি সাক্ষাতের রীতি শুরু করেছেন চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ওয়াশিংটনের মসনদে নতুন প্রেসিডেন্ট বসতেই নিজেদের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকটি সেরে নিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যদিও এবারের বৈঠকের তাৎপর্য ছিল আলাদা। কারণ 'ট্রাম্প টু পয়েন্ট ও' প্রশাসনের পথচলা বৈশ্বিক রাজনীতির ভোল পাল্টে দিতে পারে এমন আশঙ্কা বাদ দিতে পারছে না বিশ্বের কোনো পরাশক্তিই।
নিজেকে নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দাবি করলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গতিবিধি বলছে, আগামী দিনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু প্রস্তুতি নিতে শুরু শুরু করেছে মস্কো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র তিনদিন আগে দ্বিপক্ষীয় সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ২০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইরান ও রাশিয়া। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শীর্ষে থাকা এই দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিনিময় হবে কী না এ প্রশ্নের জবাব না দিলেও পুতিন বলছেন, তেহরানের হয়ে পরমাণু প্রকল্প হাতে নিতে আগ্রহী মস্কো।
তেহরান-মস্কো জোট পশ্চিমা বিশ্বের জন্য যে সুখকর কোনো খবর না তা ফলাও করে প্রচার করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উত্তর কোরিয়া যেভাবে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে করে তাইওয়ান প্রণালি ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় পিয়ং ইয়ংকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে। কারণ ওয়াশিংটনের আধিপত্য ধরে রাখার পথে বড় বাঁধা হতে পারে উত্তর কোরিয়া-ইরান-রাশিয়া জোট।
এই যখন অবস্থা, তখন আগামী সপ্তাহ থেকে চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আর নতুন বছরের প্রথমদিন ইউক্রেনের কারণে ইউরোপের গ্যাসের বাজার হাতছাড়া হয়েছে মস্কোর। আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, এমন পরিস্থিতিতে ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক- শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল না। রুশ প্রেসিডেন্টও মনে করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই অস্থিরতা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, 'বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদার করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস এবং সমতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের এই সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলমান অস্থিরতা কিংবা অভ্যন্তরীণ কোন্দল এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না।'
যদিও সিজিটিএন এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠকের সঙ্গে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্রেমলিনের বরাতে সিজিটিএন আরও দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারবে না। তবে, আন্তর্জাতিক পরিসরে অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ বা নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংগঠনকে সুরক্ষা দিতে একযোগে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
তিনি বলেন, 'নতুন বছরে চীন-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিরোধের পরিকল্পনা করছি আমরা। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক যত জোরদার হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুশাসন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা ততো সহজ হবে।'
চীন-রাশিয়ার এই বন্ধুত্বকে নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে গ্রহণ করবেন কিংবা বেইজিং-মস্কোর সাথে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন টানাপড়েন কোন দিয়ে মোড় নেয়- এখন থেকে সেদিকেই নজর থাকবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।