হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান সংঘাতের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল বুলেটের পরিবর্তে দুর্ভিক্ষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। ১১ সপ্তাহ আগে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেন নেতানিয়াহু।
ঐ একই সময়ে উপত্যকাজুড়ে স্থল অভিযানের তীব্রতা বাড়ায় ইসরাইলি সেনারা। গাজায় ৭৭ শতাংশ অঞ্চলের অবকাঠামো ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয় শরণার্থী শিবির, স্কুল ও হাসপাতালে। বেছে বেছে হত্যা করা হয় সাংবাদিক-চিকিৎসকদের। উপত্যকায় বন্ধ করে দেয়া হয় বিদেশি সংবাদ কর্মীদের প্রবেশাধিকার।
চলমান সংঘাতের ইসরাইলের সাম্প্রতিক গতিবিধিকে কেউ তুলনা করছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে, কেউ বলছেন হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে না পেরে ক্ষ্যাপাটে আচরণ করছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তোয়াক্কাই করছেন না কোনো আইন-আদালতের।
এমন প্রেক্ষাপটে আবারো মধ্যস্থতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ। নতুন করে গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব তোলেন, যাতে সায় দেয় ইসরাইল। কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে হামাস। সংগঠনটির দাবি, গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার, ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি সচল করা থেকে শুরু করে তাদের কোনো দাবির প্রতিফলন ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে।
যদিও এই প্রস্তাবটি যে হামাস মানবে না তা আগে থেকেই অনুমান করছিলেন বিশ্লেষকরা। কারণ, তারা মনে করেন, উইটকফ যে অন্তর্বর্তী সমাধানের কথা বলছেন, তা ইসরাইলিকে বাড়তি সুবিধা দেয়া জন্য। জীবিত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে নিজদেশে মারাত্মক চাপে আছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার বিরুদ্ধে চলছে দুর্নীতির মামলা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হামাসকে চাপ দিয়ে জিম্মিদের ফেরানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই তার।
কিন্তু গেল ১১ মাসে সব ধরনের চেষ্টা করেও হামাসকে টলাতে পারেনি নেতানিয়াহু। বরং আরো ক্ষীণ হয়েছে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত যখন ত্রাণ আটকে রেখেও কাজ হল না তখন মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হল ইসরাইল। অথচ ত্রাণ বন্ধ রাখা বা বেছে বেছে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের হত্যার আগে ওয়াশিংটনের তোয়াক্কাই করেনি তেল আবিব।
তবে এতকিছুর পরেও কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, সাময়িক অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়নি। কারণ যে কোনো মূল্যে গাজায় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, আর সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন হামাস জিম্মিদের ফেরানোর বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হবে। আর যুদ্ধটি চালিয়ে যেতে হলেও ইসরাইলকে জিম্মিদের দেশে ফেরত আনতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।





