ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা দীর্ঘদিনের। কয়েক দশক ধরে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশ। গেল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে প্রায় দুইশ' ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালায় ইরান। এর প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরাইল। জবাবে ইরানও ছেড়ে কথা বলবে না। এতে ক্রমেই সরাসরি সংঘর্ষের মুখোমুখি হচ্ছে তেহরান ও তেল আবিব।
ইরানকে এর চরম মাশুল গুণতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ইরানের তেল উৎপাদন অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলার হুমকি দিয়েছে তেল আবিব। এর প্রভাবে এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি তেল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে একটি ইরান। শুধু তাই নয়, তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকিও দিয়েছে ইসরাইল।
যদিও, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনায় ইসরাইলকে সমর্থন দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার তেল আবিবের আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে গেলেও, জাতিসংঘ মহাসচিবকে ইসরাইলে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউজ।
জো বাইডেন বলেন, 'জি সেভেন সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছি। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। ইরানের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে ইসরাইল কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে ইসরাইলকে হিসাবনিকাশ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।'
এদিকে ইরান বলছে তারা ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তবে ইসরাইলের যেকোনো আক্রমণের কঠোর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলের নিরাপত্তা হল সমস্ত মুসলমানদের নিরাপত্তা। আমরা কোনো যুদ্ধ বা রক্তপাত চাই না। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে, প্রতিটি বক্তব্যে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছি। যুদ্ধ সংঘাতের মধ্যে কোনো জাতি বা অঞ্চল উন্নতি করতে পারে না।'
এদিকে, ইরান-ইসরাইলের চলমান সংঘাত নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ। এতে, সংস্থাটির মহাসচিব উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সংঘাত যেদিকে যাচ্ছে তাতে অচিরেই তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এজন্য যতদ্রুত সম্ভব সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের ওপরও জোর দেন তিনি। অন্যদিকে, ইরান বলেছে, দেশের নিরাপত্তায় যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পিছুপা হবে না তার দেশ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, 'ইরান যেকোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রস্তুত। আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, তার সবই করবে ইরান। নিজেদের রক্ষায় ইরান পিছু হটবে না।'
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সংঘাত বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে ফেলছে। বেসামরিক নাগরিকদের যেভাবেই হোক আমাদের রক্ষা করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দিতে পারি না।'
এদিকে, ইসরাইলে ইরানের চালানো হামলার সমর্থনে তেহরানে আনন্দ মিছিল করেছেন হাজারও বাসিন্দা। এসময়, চলমান সংঘাতের জন্য ইসরাইলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করেন তারা।
ইরানের স্থানীয় একজন বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মিথ্যাচার করছে। যুদ্ধবিরতি অর্জনের প্রধান বাধা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।'
তেহরানের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র সব দেশেই সংকট সৃষ্টি করছে। অন্য দেশের সংকট ও কষ্টের অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ইতিবাচক কোনো ভূমিকা নেই।'
মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তির চলমান উত্তেজনার মধ্যেও থেমে নেই গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন। এতে, যতই সময় গড়াচ্ছে যতই যেন বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা হচ্ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে।