মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

আইডিএফের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ঘোষণা ইসরাইল বিমানবাহিনীর

ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক হামলা লেবাননে প্রাণহানি ৭০০ ছাড়িয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়েছেন এক লাখের বেশি বাসিন্দা। এর মধ্যেই স্থল অভিযান শুরুর জন্য আইডিএফের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলো ইসরাইলের বিমানবাহিনী। অন্যতম লক্ষ্য হবে হিজবুল্লাহর শক্তি কমাতে ইরান থেকে আসা অস্ত্রের সব চালান আটকে দেয়া। হুমকি ধামকিকে পাত্তা না দিয়ে ইসরাইলি ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইয়েমেনের হুতিরা বিদ্রোহীরাও।

যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর আহ্বানে সাময়িক যুদ্ধবিরতির সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মতো করেই লেবাননেও আগ্রাসনের মাত্রা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলি ভূখণ্ডেও পাল্টা আঘাত হানছে হিজবুল্লাহ। যুক্ত হয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ছুঁড়েছে সারফেস-টু-সার্ফেস ক্ষেপণাস্ত্র। তবে হুতিদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দাবি করছে ইসরাইল।

প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে পূর্ণশক্তি নিয়ে লেবাননে স্থল অভিযানের পথে এগুচ্ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ। ঝুঁকি এড়াতে নিজেদের মতো করে দক্ষিণ লেবানন সীমান্ত এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন আইডিএফ সদস্যরা। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে এখনও জড়ো করা হচ্ছে অসংখ্য ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান।

ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে সফল হতে আইডিএফের সঙ্গে একত্রে হামলা জোরালো করার ঘোষণা দিয়েছে বিমানবাহিনী। এছাড়া ইরান থেকে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পৌঁছানোর সব পথ বন্ধ করাও অন্যতম বড় লক্ষ্য ইসরাইলের। এটিকে প্রাধান্য দিয়েই যুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইলের বিমানবাহিনী। কারণ ইরানের অস্ত্রে হিজবুল্লাহ শক্তি দেখায় বলে দাবি তাদের।

ইসরইলি বিমান বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল টোমার বার বলেন, 'ইরান থেকে যেন লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছে কিছুতেই অস্ত্র আসতে না পারে, তার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো। কারণ ইরান থেকে আসা অস্ত্র দিয়েই হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। ইরান থেকে অস্ত্রের চালান না পেলেই শক্তি কমে যাবে হিজবুল্লাহর। সব মিলিয়ে আমরা আইডিএফ'র সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

এদিকে হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার নাম করে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে লেবাননের অসংখ্য নিরীহ মানুষকে। বেসামরিক বাড়ি-ঘরে বোমা নিক্ষেপ করে চালানো হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ। এই যখন অবস্থা, তখন নিজেদের বাসস্থান ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন দক্ষিণের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বন্ধু-স্বজনদের বড়িতে গিয়ে ঠাঁই নিচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকে এখনও খোলা আকাশের নিচের বাসিন্দা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমার বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। বৃষ্টির মতো বিমান হামলা হচ্ছিলো। তাই বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন অজানা পথে যাত্রা করছি। কোথায় জীবনের নিরাপত্তা পাবো জানি না।'

স্থানীয় অন্য এক নাগরিক বলেন, 'আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা আছে। আমরা একটি জরুরি কক্ষ স্থাপন করেছি। নার্স এবং চিকিৎসকরা কাজের জন্য প্রস্তুত।'

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে লেবানন গভীর সংকট ও অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন বলে দাবি করলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই যুদ্ধ বন্ধে জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে যুদ্ধবিরতির আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বুহাবিব।

তিনি বলেন, 'লেবানন এমন একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের সমৃদ্ধি হুমকির মুখে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই সংকটকে ধারণ করা অসম্ভব।

২০০৬ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধ থামার পর ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসনের জেরে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় হিজবুল্লাহ। সম্প্রতি পেজারসহ বিভিন্ন যোগাযোগ ডিভাইস বিস্ফোরণে লেবাননে বহু হতাহতের পর সংঘাত উত্তেজনা চরম পর্যায় পৌঁছায়।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর