রাজবংশের রক্ত বহন শুধু নয়, চলনে-বলনে, পোশাকে-আশাকে সবকিছুতে রাজকীয়তার আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে জুড়ি নেই অলঙ্কারের। সে রাজবংশ যদি হয় ১২শ' বছর ধরে টিকে থাকা ব্রিটিশ রাজপরিবার, তাহলে তো কথাই নেই! হাজার বছর ধরে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ব্যবহৃত গহনা বরাবরই সাধারণের অন্যতম আগ্রহের বিষয়।
এ আগ্রহের কথা ভেবেই লন্ডনের ভি অ্যান্ড এ জাদুঘরে শুরু হলো একটি প্রদর্শনী। যেখানে শোভা পাচ্ছে ঘড়ি, মুকুটসহ বিলাসবহুল পণ্যের নামিদামি প্রতিষ্ঠান কার্টিয়ারের তৈরি অলঙ্কার। ১২৩ বছর কার্টিয়ারের সাথে সম্পর্ক ব্রিটিশ রাজপরিবারের। রাজপরিবারকে পণ্য ও সেবাদানে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্টিয়ারকে ১৯০২ সালে প্রথমবার রাজপরোয়ানা বা অনুমতি সনদ দেন রাজা সপ্তম জর্জ।
ভি অ্যান্ড এ'র সিনিয়র জুয়েলারি কিউরেটর হেলেন মোলসওর্থ বলেন, 'রাজপরিবার নিয়ে লন্ডনের গল্পটি এখানে উঠিয়ে এনেছি আমরা, যেখানে সপ্তম এডওয়ার্ড ১৯০২ সালে লন্ডনে কার্টিয়ারের শাখা খুলতে সাহায্য করেছিলেন। তারপর থেকে রাজপরিবারের প্রতিটি প্রজন্ম একটি করে রাজপরোয়ানা জারি করেছে। এটাই সাক্ষী এই প্রতিষ্ঠানের দুর্দান্ত প্রতিভা আর নকশার।'
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৮৪৭ সালে ল্যুইস-ফ্রান্সিস কার্টিয়ারের হাত ধরে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে যাত্রা শুরু কার্টিয়ারের। রাজপরিবারের পাশাপাশি তারকাদের কাছেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটির তৈরি অলঙ্কার। প্রদর্শনীতে ওঠানো সাড়ে ৩শ' অলঙ্কারের অন্যতম, দুর্লভ গোলাপি উইলিয়ামসন হীরা দিয়ে ফুলের নকশায় তৈরি ব্রুচ। ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে নিজের অভিষেক অনুষ্ঠানে এবং পরে ছেলে, বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়েতেও ব্রুচটি পরেছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এছাড়া ১৯৩৮ সালে রাজকোষাগারে স্থান পাওয়া গোলাপ ফুলের ত্রিমাত্রিক নকশায়, সিঙ্গেল কাট হীরা দিয়ে কার্টিয়ারের তৈরি রোজ ক্লিপ ব্রুচও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে যা দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানে পরেছিলেন বোন প্রিন্সেস মার্গারেট।
শুধু ব্রিটিশ রাজপরিবার নয়, অনেক তারকা-মহারথীর ঝুলি থেকেও অলঙ্কার শোভা পাচ্ছে কার্টিয়ারের প্রদর্শনীতে। গায়িকা ও অভিনয়শিল্পী গ্রেস কেলির বাগদানের পাওয়া হীরা আংটি, যেটি ১৯৫৬ সালে তার শেষ চলচ্চিত্র 'হাই সোসাইটি'তে পরেছিলেন তিনি; অভিনয়শিল্পী এলিজাবেথ টেইলরকে তার তৃতীয় স্বামী মাইক টোডের দেয়া রুবি, বা চুণিপাথরের তৈরি নেকলেস; নীলকান্তমণির সাথে হলদে ও গোলাপি আভার স্বর্ণে মোড়ানো ঘড়ি, যেটি প্রথম পরেছিলেন সাবেক মার্কিন ফার্স্টলেডি জ্যাকি কেনেডি; ১৯০২ সালে তৈরি একটি মুকুট- এমন অনেককিছুই জনগণের সামনে এনেছে কার্টিয়ার।
হেলেন মোলসওর্থ বলেন, '১৯০২ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময় কাউন্টেস অব ইউসেক্সের পরার জন্য একটি দারুণ মুকুট তৈরি করা হয়েছিল। সেটির আধুনিকায়ন করেছি আমরা এবং ২০১৬ সালের একটি ফটোশ্যুটে গায়িকা রিহানাও এটি পরেছিলেন। অর্থাৎ ১শ' বছর পরও অলঙ্কারের পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা অক্ষত রাখতে এবং ভবিষ্যতের রীতি মাথায় রেখেই অলঙ্কার তৈরি করতো কার্টিয়ার।'
কার্টিয়ারের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ ছাড়াও বিভিন্ন শহরে শাখা খুলেছে শতবর্ষী ব্র্যান্ডটি। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কার্টিয়ার পরিবারের হাতে ব্র্যান্ডটির নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে এর মালিকানা সুইস প্রতিষ্ঠান রিশমো'র।