মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৯০ শতাংশের বেশি ঋণে জর্জরিত মিশর। এর মধ্যে দেশটির মুদ্রার দর পতন তো আছেই। তার ওপর বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ফুরিয়ে আসছে। লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বলতে গেলে 'লাইফ সাপোর্টে' জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে দেশটির অর্থনীতি।
চার মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন এবং লোহিত সাগরে হুতি আতঙ্কে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কায়রোর অর্থনৈতিক সংকট আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তি হিসেবে- বেশ কয়েকটি কারণও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি কারণ হলো, যুদ্ধের প্রভাবে পর্যটন শিল্প এবং সুয়েজ খাল থেকে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার আয় ব্যাপকহারে কমে যাওয়া।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরেও পর্যটন খাত থেকে মিশরের রাজস্ব এসেছিলো এক হাজার ৩শ' ৬৩ কোটি ডলার। তবে যুদ্ধের কারণে নভেম্বর থেকে বুকিং কমতে থাকায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতের রাজস্ব ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমার আভাস মিলছে। এমন হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবে ৪ থেকে ১১ শতাংশ। জিডিপিও সংকুচিত হয়ে পড়বে।
মিশরীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এই বছরের জানুয়ারিতে সুয়েজ খাল থেকে ৫০ শতাংশ রাজস্ব কমেছে। তাই ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুয়েজ খাল থেকে ৯৪০ কোটি ডলার রাজস্ব এলেও চলতি অর্থবছরে এই খাতে ধ্বসের শঙ্কা রয়েছে।
মিশরের অর্থনৈতিক সংকট গভীর হওয়ার পেছনের কারণগুলোর মধ্যে গ্যাস খাত অন্যতম। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার জেরে তামার গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলন অস্থায়ীভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরাইল। এর ফলে এখান থেকে মিশরে আর গ্যাস রপ্তানি হচ্ছে না। মিশরও তা থেকে এলএনজি উৎপাদন করে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারছে না।
এদিকে মিশরের রাফা সীমান্তে আশ্রয় নেয়া ১৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিদের নিয়ে চিন্তায় আছে মিশর। যেকোন মূল্যে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে চায় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার। কারণ ইতোমধ্যেই দেশটিতে রয়েছে ৯০ লাখ শরণার্থী। ১৯৪৮ সালে যুদ্ধ বন্ধের পর ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ ঘরে ফিরতে দেয়নি ইসরাইল। সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে দেশটি।
সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে মিশরের ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সংস্কার প্যাকেজের প্রধান বিষয়গুলো নিয়েও মিশরের চ্যালেঞ্জ কম না। এর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার শেয়ার বিক্রি, ভর্তুকি কমানো, নমনীয় বিনিময় হারের দিকে অগ্রসর হওয়া এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা আরও স্বচ্ছ করা। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সংস্কারে মিশরীয় নীতি-নির্ধারকরা পিছিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।