সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনে শেয়ারমূল্য শূন্য; বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না কিছুই!

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনে শেয়ারমূল্য শূন্যে দাঁড়িয়েছে
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনে শেয়ারমূল্য শূন্যে দাঁড়িয়েছে | ছবি: এখন টিভি
0

সম্প্রতি আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংক নিয়ে গঠন করা হয় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক। তবে শেয়ারমূল্য শূন্য হওয়ায় নতুন ব্যাংকে কিছুই পাচ্ছেন না শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এ নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের। এবার অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ভিন্ন মত। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ্য রক্ষার বিষয়ে কী বলছে ব্যাংক কোম্পানি আইন?

ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সীমাহীন লুটপাট আর দুর্নীতিতে খাদের কিনারায় পৌঁছায় ব্যাংক খাত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো, যার প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও এবং এর ক্ষত এখনো ভোগাচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে।

সংকট কাটাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় ব্যাংকগুলোর মালিকানা নেয় সরকার। শেয়ারের দাম ঋণাত্বক হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না কোনো অর্থ, দেয়া হচ্ছে না সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কোনো শেয়ারও। তবে দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের হলেও বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপানোর অভিযোগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা জানান, এর জন্য দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিকিউরিটি অ্যাকশন কমিশন। কেননা তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শেয়ারবাজারে যুক্ত হয় ২০০৮ সালে, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয় ২০২২ সালে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২০০০ সালে এবং এক্সিম ব্যাংক শেয়ারবাজারে আসে ২০০৪ সালে।

সর্বশেষ এসব ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫৮২ কোটিতে, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩১ দশমিক ১৪ , ইউনিয়ন ব্যাংক ৩২ দশমিক ৯৪, এক্সিম ব্যাংক ৩৮ দশমিক ৩৬ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক অনুমোদনের আগে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছিল ১ টাকা ৯০ পয়সায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১ টাকা ৭০ পয়সা, ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় টাকা, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩ টাকা।

আরও পড়ুন:

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিজেদের অপরাধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তখনই বিনিয়োগ করেছে, যখন ওদের অডিট আপত্তি ছিল না। তাদের যে হিসাবায়ন, তার সবগুলোতে কিন্তু সেন্ট্রাল সম্মতি দিয়েছে। অতএব, সেই সম্মতির ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এতদিন বিনিয়োগ করে আসছিল।’

আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘দায়ভারটা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি বলবো, এটা ন্যায়বিচারেরও পরিপন্থি। তাই আমার মনে হয়, এ বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।’

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা অবসায়ন করা হলে সবার আগে আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করার নির্দেশনা রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে, যা পরিশোধ করতে হবে তিন মাসের মধ্যে। এরপর যদি ব্যাংকের সম্পদ কিংবা অর্থ থাকে তাহলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ পাবেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ বলছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবার আগে দেখতে হবে আমানতকারীদের স্বার্থ্য।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘পৃথিবীজুড়েই ব্যাংকিং কোম্পানির ক্ষেত্রে ডিপোজিটারের রাইট আগে, তার টাকা আগে দিতে হয়। দেয়ার পর টাকা থাকলে অন্য লেন্ডারদের টাকা, অর্থাৎ ব্যাংকের কাছে যদি অন্য কেউ টাকা পায়, তাদের টাকা দিতে হবে। সর্বশেষে শেয়ারহোল্ডাররা টাকা পায়। এক্ষেত্রে আমরা যেহেতু শুনেছি যে, ডিপোজিটারকে দেয়ার মতোই টাকা নেই ব্যাংকগুলোতে, তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের টাকা কীভাবে দেবে, এর কোনো সমাধান নেই।’

সব সংকট কাটিয়ে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক আমানতকারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ্য রক্ষার মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

এসএইচ