প্রথম মেয়াদেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রিয় অর্থনৈতিক অস্ত্রটি হল শুল্ক। এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে ঠিক যেভাবে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন, সেভাবে আগের চেয়েও বেশি আগ্রাসী হয়েছেন শুল্ক আরোপে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক যুদ্ধ কৌশলের বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপ। প্রথম মেয়াদ থেকে শুরু করে ট্রাম্পের সকল অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় জুয়ার শামিল হয়ে উঠেছে এই শুল্কযুদ্ধ। দ্রব্যমূল্য আর সামগ্রিক অর্থনীতি হিসাব করলে এর অঙ্ক এক লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ নামক এ জুয়ায় পরাজয় অবধারিত সব পক্ষের, বাদ পড়বেন না ট্রাম্প নিজেও।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সহযোগী অধ্যাপক থমাস স্যাম্পসন বলেন, 'এটা এমন এক বাণিজ্য যুদ্ধ, যাতে সবাই হারবে। মার্কিন ভোক্তা থেকে শুরু করে কানাডা আর মেক্সিকোর ঘরে ঘরে এর প্রভাব পড়বে। ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের সদ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে কর দেয়ার পর মার্কিন পরিবারগুলোর আয় এক শতাংশ কমে যাবে এই শুল্কের প্রভাবে। যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বলে কানাডা ও মেক্সিকোতে করের পরিমাণ আরও বেশি হবে।'
মার্কিন জনগণের সম্ভাব্য দুর্ভোগের কথা ভেবে মেক্সিকো, কানাডা আর চীনের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে দুর্ভোগ সাময়িক দাবি করে এবং দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ায় নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবেন না বলেই আভাস দিয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক যুদ্ধে ট্রাম্পের জন্য ঝুঁকির পাল্লাই ভারি। বাড়তি শুল্কের প্রভাবে আগে থেকেই নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হলে, পুঁজিবাজারে ধস নামলে এবং বেকারত্ব বাড়লে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে বাণিজ্য যুদ্ধ, বাড়বে অনিশ্চয়তা।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সহযোগী অধ্যাপক থমাস স্যাম্পসন বলেন, 'এই মুহূর্তে ভীষণ এক অনিশ্চয়তা কাজ করছে। আমরা জানি না যে মেক্সিকো কিংবা চীনের পাল্টা পদক্ষেপ ঠিক কী হতে যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত আলোচনার ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তাও জানি না। সপ্তাহের শেষ নাগাদ শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, এসব ব্যবস্থা এই কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধেই সীমিত থাকবে নাকি এটা আরও বড় কোনো বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা, তাও আমরা জানি না।'
বিগত মেয়াদে মূল্যস্ফীতি বড় সমস্যা হয়ে ওঠার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল ট্রাম্পকে। ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন জনগণ, এমন সময়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছেন তিনি। বিগত মেয়াদে বিদেশি পণ্য আমদানিতে সবমিলিয়ে ৩৮ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুণের বেশি। ক্রিপ্টোমুদ্রা খাতে রেকর্ড উত্থানের পর ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবে সোমবার এক লাখ ডলারের অনেকটা নিচে নেমেছে বিটকয়েনের দাম যা তিন সপ্তাহের সর্বনিম্ন। এশিয়ার পুঁজিবাজারে নিম্নমুখী সূচকে শুরু হয়েছে লেনদেন।