চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৫ দিনের এই সফরে জিনপিং যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চড়া শুল্কারোপ হয়েছে, এমন কয়েকটি দেশে। তার লক্ষ্য, মার্কিন শুল্কে বিপর্যস্ত হওয়ার আগেই নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য – বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা। ভিয়েতনাম সফরে এসে চীনা প্রেসিডেন্ট ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনকে আহ্বান জানিয়েছেন, এই অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্যে জোর দিতে।
সফরে মালয়েশিয়া আর কম্বোডিয়ায়ও যাবেন তিনি। আলোচনা হবে বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে। বৈঠকে শি জিনপিং জানান, চীনের বাজার ভিয়েতনামের জন্য উন্মুক্ত। বাণিজ্য নিয়ে যেকোনো দেশের গুণ্ডামিকে যৌথভাবে ঠেকানোর আহ্বান জানান তিনি। বলেন, স্থল আর সমুদ্রপথে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। এসময় ৪৫টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন দুই নেতা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আর চীন, দুই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হ্যানয়।
চীনা প্রেসিডেন্ট যেমন এশিয়ায় বাজার খুঁজছেন, তেমনি এই অঞ্চলে বাজার ধরতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্প। আর তাই পারস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের কয়েকদিনের মধ্যেই এই সফরে গিয়েছেন শি। এর আগে ওয়াশিংটন আর বেইজিংয়ের মধ্যে তীব্র শুল্কযুদ্ধ দেখে বিশ্ববাসী। চীনা প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফর ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, দুই দেশের এই বাণিজ্যযুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি যাই হোক না কেন, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
চীনে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি পণ্যের বাজারে ধস নামবে। একইভাবে ধস নামবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি করা ৪৪ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যেও। এই বাণিজ্য আগামী ১৮ মাসে কমতে পারে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। ২০২৪ সালে চীনে ১৪ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য ঘাটতি এখন ২৯ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এরমধ্যেই আবারও পারস্পরিক শুল্কারোপ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্কারোপে মার্কিন কোষাগারে দৈনিক আসবে ২০০ কোটি ডলার। আদতে যেই পরিমাণ ২০ কোটি ডলার।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, জাপানের পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত চীনের কাছে। প্রায় ৭৬ হাজার কোটি ডলারের ঋণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বেইজিংয়ের কাছে উপায় আছে, ডলারের অবমূল্যায়নকে প্রভাবিত করার। যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দেয়ার কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের আধিপত্য আর কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। এই ঋণকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে বেইজিং।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বন্ধ হয়ে গেলে কমদামি চীনা পণ্যে এমনিতেই সয়লাব হয়ে যাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ। এখনই ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকছে। দেশটিতে চীনা বিনিয়োগও অনেক। অন্যদিকে, দক্ষিণ – চীন সাগর ইস্যুতে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গিয়ে চীনকে পুরোপুরি সমর্থন নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা।