ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক কখনই স্বাভাবিক হয়নি। তাই হয়তো পরমাণু প্রকল্প নিয়ে প্রথম দফায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনা সফল হয়েছে, এই তথ্য নিশ্চিত করলেও হঠাৎ জরুরি বৈঠক ডেকে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সশস্ত্র বাহিনীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, শত্রুপক্ষ ইরানের সামরিক সক্ষমতা মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু ইরান মুসলিম দেশ হিসেবে নিজের পরিচয় নিয়ে স্বাধীনভাবেই মাথা উঁচু করে থাকবে।
এমন অবস্থায় পরমাণু ইস্যুতে শনিবার ওমানেই দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসছে ওয়াশিংটন ও তেহরান। বৈঠক আর খামেনির সতর্কবার্তা কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ইরান ইচ্ছা করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে গড়িমসি করছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, যেকোনো মূল্যে ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে হবে, আর তা না হলে তেহরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমি চাই ইরান ধনী রাষ্ট্র হোক। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার। তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারবে না। জানি তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র তাদের কাছে আসলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। নিজের জন্য করবো না, পুরো বিশ্বের জন্য করবো। উগ্রপন্থিদের কোন পরমাণু অস্ত্র থাকবে না। পরমাণু অস্ত্র থাকলে তারা মহান দেশের তকমা পাবে না।'
আরো পড়ুন:
এদিকে প্রথম দফার আলোচনা ফলপ্রসূ হলেও দ্বিতীয় দফার আলোচনার আগেই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি কেন রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পরমাণু ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে বরাবরই ইতিবাচক ছিল মস্কো।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই বলেন, 'চাই আলোচনা ফলপ্রসূ হোক। আমরা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু একপক্ষ শুধু নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছে। হুমকির সুরে কথা বলছে, যা ইরানের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। সেইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। কোন বিবৃতি বা ফাঁকা বুলিতে হবে না। ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা পরোক্ষভাবেই হবে।'
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলে হয়, ইরানের মজুত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৃতীয় কোন দেশে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হতে পারে সেই দেশ রাশিয়া। যদিও এই প্রস্তাবকে কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না তেহরান।
এদিকে ইরানের সাধারণ মানুষ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বরাবরই সংশয় রয়েছে তাদের। অনেকেই এই আলোচনার বিষয়ে ইতিবাচক থাকলেও কেউ কেউ বলছেন, বৈঠকে ইতিবাচক কোনো ফলাফল আসবে না।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'আলোচনা চলুক। আশা করছি, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র যদি কথা রাখে, ভালো ফলাফল আসবে।'
অন্য একজন বলেন, 'আমার মনে হয় না ভালো কিছু হবে। ইরানিরা শান্তিপ্রিয় হলেও যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসী। ইরানও যুক্তরাষ্ট্রকে উস্কানি দেয়ার মতো পদক্ষেপই নিচ্ছে।'
এমন অবস্থায় ইরানের সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখা ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস বলছে, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা আর সামরিক শক্তির ইস্যুতে আলোচনায় কোন ধরনের আপোস হবে না। সশস্ত্র বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি জানান, ইরানের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত। শত্রুপক্ষের কোন কুচক্র বাস্তবায়ন হবে না।