তিন আলাদা নির্বাহী আদেশে নিকটতম দুই প্রতিবেশী ও শীর্ষ দুই বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ করে, আর চিরবৈরি চীনের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হচ্ছে আর একদিন পরই। জবাবে একইদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সাড়ে ১৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে কানাডা। একই প্রস্তুতি নিচ্ছে মেক্সিকোও।
ত্রিমুখী শুল্ক যুদ্ধ কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবারই। ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের বিপরীতে তাৎক্ষণিকভাবে তিন হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করছে কানাডা। ২১ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে আরও সাড়ে ১২ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক যোগ করবে অটোয়া। বাণিজ্য যুদ্ধে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থাতেই নমনীয় না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রুডোর প্রশাসন। ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক যুদ্ধ মার্কিন অর্থনীতিকেই গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্টও।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টেন হিলম্যান বলেন, 'আমাদের সরকারের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়। কানাডা এমনটা করতে চায়নি। নিচে নামার এ পথে যেতে আমরা আগ্রহী নই। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ক্রেতা হতে এবং তা অব্যাহত রাখতে চাই আমরা। পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় মার্কিন পণ্য সবচেয়ে বেশি আমরা কিনি। মার্কিন পণ্য আমরা পছন্দ করি। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকৃত পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেশটিতে ৮০ লাখ কর্মক্ষেত্র বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা। এই ধারা চলতে থাকা উচিত।'
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবম বলেন, '২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়বে দুই দেশের ওপরেই। কিন্তু বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রভাব হবে মারাত্মক। মেক্সিকো থেকে যতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়, দেশটিতে সেসব পণ্যের দাম অনেক বেশি বাড়বে। অন্তত ২৫ শতাংশ খরচ বাড়বে। মেক্সিকো এই যুদ্ধ চায় না। বরং প্রতিবেশীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চাই আমরা।'
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো ও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। ২০২২ সালে তিন দেশ থেকে দেড় হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। সমালোচকরা বলছেন, তিন দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে জীবনযাত্রা কঠিন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। অবশ্য অভিবাসন দমন, মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতে গতি ফেরাতে নিজের পদক্ষেপের সাফাই গেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও দিয়েছেন শুল্ক আরোপের হুমকি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসদাচরণ করছে কানাডা। আমাদের ব্যাংকগুলোকে তারা ঢুকতে দেয় না। জ্বালানি তেল দেয় কঠোর শর্তে। আমাদের কৃষিপণ্য তাদের দেশে ঢুকতে দেয় না। আর আমরা বছরে ২০ হাজার কোটি ডলারের ভর্তুকি দিই কানাডাকে। মেক্সিকো-কানাডা থেকে কোটি কোটি মানুষ ঢুকে পড়ে আমাদের দেশে। এসব আর সহ্য করবো না। নিশ্চিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেবো।'
শুল্ক যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে বিভক্ত করছেন ট্রাম্প, অভিযোগ ইউরোপীয় নেতাদের।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোল্জ বলেন, 'বিশ্বব্যাপী পণ্য ও মালামাল আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে বিশ্বায়ন ঘটেছে, তা এক বিশাল সফলতার প্রমাণ এবং যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আরও অনেক অঞ্চলে সকলের জন্য সমৃদ্ধির পথ খুলে দিয়েছে। এ পর্যায়ে শুল্ক যুদ্ধ দিয়ে বিশ্বকে বিভক্ত না করাটা গুরুত্বপূর্ণ।'
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'আমরা জোরদার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দেখতে চাই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনাতেও একই বার্তা দিয়েছি।'
যুক্তরাজ্যের কিয়ার স্টারমারের সরকারের প্রতি সন্তোষ জানালেও ইইউ'র বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ, কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছুই নিজেদের অঞ্চলে ঢুকতে দেয় না আঞ্চলিক জোটটি। ইউরোপের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চাওয়ার কারণ হিসেবে তার দাবি, নিজেদের ৩০ হাজার কোটি ডলার ঘাটতি বাজেট সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কোটি কোটি যানবাহনসহ বিপুল অঙ্কের পণ্য নেয় ইইউ থেকে, বিনিময়ে পায় না কিছুই।