যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা। এরইমধ্যে দেশগুলোর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডলারের বিপরীতে কমতে শুরু করেছে দেশগুলোর মুদ্রার মান।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে মেক্সিকোর সীমান্ত অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনায় পণ্যের দাম বাড়বে। বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও বাধার মুখে পড়বে। গেল সেপ্টেম্বর মাসে মেক্সিকোর মোট রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একজন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের শহরগুলো অনেক প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপে সীমান্তে চোরাচালান বাড়বে। দুই দেশের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা উচিত।'
মেক্সিকোর স্থানীয় একজন বলেন, 'মেক্সিকো প্রতিবেশি দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু না। তাই ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের স্বার্থ দেখছেন। আমাদেরও তা করা উচিত।'
মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম সতর্ক করেছেন, এই শুল্কনীতিতে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে। মেক্সিকোতে স্থাপিত মার্কিন কোম্পানিগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট।
ক্লদিয়া শেনবাউম বলেন, 'সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান বন্ধে কাজ করছে মেক্সিকো সরকার। ট্রাম্পকে এরইমধ্যে এক চিঠিতে জানানো হয়েছে। এরপরও শুল্ক আরোপ করে এতে মার্কিন অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ৮০ বছর ধরে মেক্সিকোতে থাকা মার্কিন কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।'
কানাডা বলছে তাদের ওপর গুরুতর আঘাত এটি। পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তর পর্বে কানাডাবাসীর চাকরি রক্ষার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে এরইমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সংকট মোকাবিলায় কানাডার ১০টি প্রদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রুডো।
তিনি বলেন, 'গত রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। আমাদের অবস্থান তার কাছে স্পষ্ট করেছি। কীভাবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে কার্যকর সব পদক্ষেপ নিয়ে কথা হয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসাথে কাজ করা হবে।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক বাড়ালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে কোনো দেশই লাভবান হবে না। আগামী বছরে কমতে পারে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
মিজুহো সিকিউরিটিজের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিভেন রিচিউটো বলেন, 'চীনের ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন পরিস্থিতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যেই আসুক চীনের ক্ষেত্রে মনোভাব পরিবর্তন হবে না। চীনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল যা বাইডেন প্রশাসনও চালিয়ে গেছে। চীনা শুল্কনীতি নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'
হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই প্রতিবেশি দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।