শ্রমিকের কর্মচাঞ্চল্যে আবারও মুখর হয়েছে শিল্প-কারখানা। সব অস্থিরতা পেছনে ফেলে সবাই এখন মনোযোগ দিয়েছেন পণ্য উৎপাদনে।
চলমান কারফিউয়ের মধ্যেও সরকারি নির্দেশনা মেনে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব শিল্প-কারখানায় আবারও শুরু হয়েছে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম। নিটিং, ডায়িং, স্পিনিং, গার্মেন্টস প্রতিটি খাতের কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কর্মীদের সুনিপুণ হাতে তৈরি এসব পোশাক রপ্তানি হবে ইউরোপের দেশগুলোতে। ময়মনসিংহের ভালুকা-ত্রিশালের সব শিল্প-কারখানায় রয়েছে কর্মব্যস্ততা। কোথাও কোথাও কাজ চলছে কয়েক শিফটে। কাজের চাপ বাড়লেও অসন্তোষ নেই শ্রমিকদের মধ্যে। দ্রুত সময়ে কাজে যোগ দিতে পারায় খুশি তারা।
একজন পোশাক শ্রমিক বলেন, 'অনেকদিন বন্ধ ছিল আমরা অস্থির হয়ে ছিলাম। এখন কাজ করছি, ভালো লাগছে। কাজ করে টাকা উপার্জন করছি, পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলছি এটাই আনন্দ।'
ময়মনসিংহ ভালুকার শেফার্ড জিনস লিমিটেডের এডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স এইচআর ম্যানেজার ইফতেখারুল আলম বলেন, 'প্রডাকশনে আমাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে। প্রতিটি শ্রমিক সুন্দরভাবে যার যার দায়িত্ব পালন করছে, কোনো অনুপস্থিতি নেই।'
সাম্প্রতিক অস্থিরতায় চারদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় সারাদেশের মতো বড় দাগে ক্ষতির মুখে পড়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। কারখানা খোলার পর ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। অর্ডারের পোশাক যথাসময়ে ক্রেতাদের কাছে শিপমেন্ট করাই এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব তাদের।
ময়মনসিংহের সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেডের এডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স পরিচালক মেজর মাহফুজুর রহমান বলেন, 'কাজ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কিছুটা কমে গিয়েছিল। সঠিক সময়ে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে। আশা করবো যে, আমাদের ক্রেতারা এবং আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন সরকারি এবং বিজিএমইএ, তারা সবাই মিলে একত্রে এই চ্যালেঞ্জ পার করার জন্য যেখানে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার তারা আমাদের সে সহযোগিতা করবেন। রপ্তানি যথাযথ সময়ে করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে সবসময়।'
ময়মনসিংহের শেফার্ড গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোকলেসুর রহমান বলেন, 'অনেক দূর থেকে শ্রমিকরা আমার এখানে এসে যোগদান করেছে। এভাবে থাকলে আমাদের অর্থনীতির চাকা খুব ভালোভাবেই চলবে। ৯৮ শতাংশ শ্রমিকই উপস্থিত হয়েছে। এর জন্য আমাদের উৎপাদনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।'
এদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা। শ্রমিকদের চলাচলের পথে শিল্প পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ জোন শিল্প পুলিশ-৫ এর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, '২৪ ঘণ্টা আমাদের বিভিন্ন দল নজর রাখে। এছাড়াও আমাদের অন্যান্য দলগুলোও সজাগ থাকে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।'
ময়মনসিংহের ভালুকা ও ত্রিশালে নিটিং, ডায়িং, স্পিনিং, গার্মেন্টসসহ ৩০০ এরও বেশি শিল্পকারখানা রয়েছে। যেখানে কাজ করেন দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক।
কর্মীর হাতে মেশিনগুলো সচল থাকলেই সচল থাকে দেশের অর্থনীতি। এতে ছেদ পড়লেই যেমন মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতির চাকা তেমনি ঘোর অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মীর পরিবারে। যেকোনো দুর্যোগ- অস্থিরতায় গার্মেন্টস শিল্পে যেন কোনো আঁচর না লাগে এমনটাই প্রত্যাশা এই খাত সংশ্লিষ্টদের।