একনজরে: আয়কর রিটার্ন দাখিল ২০২৪-২৫
- নির্ধারিত শেষ তারিখ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫।
- সময় বাড়ানোর প্রস্তাব: ১৫ দিন থেকে ১ মাস (আলোচনাধীন)।
- অনলাইনে নিবন্ধিত করদাতা: ৪২ লাখ।
- এখন পর্যন্ত রিটার্ন জমা: ২৬ লাখ (নিবন্ধিতদের প্রায় ৬২%)।
- গত বছরের মোট রিটার্ন: ৪৫ লাখ (সেই তুলনায় এবার এখনো ১৯ লাখ কম)।
- মোট অনলাইন নিবন্ধন: ৪২,০০,০০০ জন
- রিটার্ন দাখিল করেছেন: ২৬,০০,০০০ জন
- এখনো দাখিল করেননি: ১৬,০০,০০০ জন
- আনুষ্ঠানিক ঘোষণা: ৩১ ডিসেম্বরের ২-৩ দিন আগে আসার সম্ভাবনা
- এনবিআরের সিদ্ধান্ত: লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সময় বাড়ানোর জোর সম্ভাবনা।
বর্তমান পরিস্থিতির পরিসংখ্যান (Current Tax Statistics)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবারের করবর্ষে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধন (Registration) করেছেন মোট ৪২ লাখ করদাতা। তবে এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে মাত্র ২৬ লাখ। অর্থাৎ, নিবন্ধিত করদাতাদের একটি বড় অংশ (প্রায় ৩৮ শতাংশ) এখনো তাদের রিটার্ন দাখিল করেননি। উল্লেখ্য যে, গত বছর প্রায় ৪৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আগামী কয়েক দিনে আরও বিপুল সংখ্যক রিটার্ন জমা পড়তে হবে, যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:
সময় বাড়ানোর পেছনে মূল কারণসমূহ (Reasons for Potential Extension)
১. প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া: গত বছরের মোট রিটার্ন জমার সংখ্যার তুলনায় এবারের সংখ্যা এখনো অনেক পিছিয়ে।
২. সার্ভার ও কারিগরি জটিলতা: শেষ মুহূর্তে একসঙ্গে অনেক করদাতা অনলাইনে চেষ্টা করায় পোর্টালে ধীরগতি বা টেকনিক্যাল গ্লিচ (Technical Glitch) দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. ই-রিটার্নে নতুন করদাতাদের অনাগ্রহ: এনবিআর চেয়ারম্যানের তথ্যমতে, বিপুল সংখ্যক মানুষ ই-রিটার্নে নিবন্ধন করলেও রিটার্ন সাবমিট করার ক্ষেত্রে জটিলতা অনুভব করছেন।
৪. ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের দাবি: বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে সময় বাড়ানোর জন্য এনবিআর-এর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
কেন সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা? (Reason behind extension)
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৪২ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য নিবন্ধন (Online tax registration) করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬ লাখ করদাতা তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত বছর যেখানে প্রায় ৪৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছিল, সেই তুলনায় এবারের সংখ্যাটি বেশ কম। মূলত করদাতাদের আরও সুযোগ দিতেই এনবিআর সময়সীমা বৃদ্ধির (Tax deadline extension) এই প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
এনবিআর চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য (Officials' Insight)
রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, "সরকার ও এনবিআর সবসময় করদাতাদের সেবা নিশ্চিত করতে চায়। যদি দেখা যায় বিপুল সংখ্যক করদাতা সময়ের অভাবে রিটার্ন দিতে পারছেন না, তবে উপযুক্ত মনে করলে সরকার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে।"
এদিকে, এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সময় বাড়ানোর ঘোষণা সাধারণত শেষ সপ্তাহে আসে। তবে এবার আইন অনুযায়ী এনবিআর নিজেই সময় বাড়াতে পারে, নাকি মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ আদেশের প্রয়োজন হবে—সেটি যাচাই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কবে? (Final decision update)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সময়সীমা বাড়ানোর আলোচনা চললেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত (Final Decision) মাসের শেষের দিকে আসতে পারে। সাধারণত ৩১ ডিসেম্বরের দুই-তিন দিন আগেই এনবিআর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন (Official Notification) জারি করা হয়।
রিটার্ন দাখিলে দেরি হলে কত জরিমানা? জেল বা আইনি জটিলতা এড়াতে যা জানবেন
বাংলাদেশে আয়কর আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের (৩১ ডিসেম্বর) মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা প্রতিটি টিআইএন (TIN) ধারীর জন্য বাধ্যতামূলক। যদি এনবিআর সময় না বাড়ায় এবং আপনি সময়মতো রিটার্ন জমা না দেন, তবে আপনাকে বেশ কিছু আর্থিক ও আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে।
১. আর্থিক জরিমানা (Penalty) : আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, সময়মতো রিটার্ন জমা না দিলে উপ-কর কমিশনার (DCT) আপনার ওপর জরিমানা আরোপ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:
জরিমানার পরিমাণ: আপনার সর্বশেষ কর নির্ধারণী বা গত বছরের করের ১০ শতাংশ অথবা কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা—এর মধ্যে যেটি বেশি হবে।
দৈনিক জরিমানা: যদি দেরি হতেই থাকে, তবে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা হারে জরিমানা যুক্ত হতে পারে।
২. অতিরিক্ত সরল সুদ (Delay Interest) : জরিমানা ছাড়াও, নির্ধারিত সময়ের পর রিটার্ন জমা দিলে বকেয়া করের ওপর প্রতি মাসে ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত সরল সুদ দিতে হবে। এই সুদ সর্বোচ্চ ২৪ মাস পর্যন্ত হিসাব করা হতে পারে। অর্থাৎ, আপনি যত দেরি করবেন, আপনার প্রদেয় করের বোঝা ততই বাড়বে।
৩. কর রেয়াত ও সুবিধা হারানো (Loss of Tax Rebate) : নির্ধারিত সময়ের পর (যাকে ‘বিলেটেড রিটার্ন’ বলা হয়) রিটার্ন জমা দিলে আপনি বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত (Tax Rebate) পাবেন না। এছাড়া ওই বছরের ব্যবসায়িক লোকসান পরবর্তী বছরের আয়ের সাথে সমন্বয় (Set-off and Carry forward) করার সুযোগও হারাবেন।
আরও পড়ুন:
৪. জেল বা কারাদণ্ড (Imprisonment): আয়কর আইনে রিটার্ন দাখিল না করা বা তথ্য গোপন করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়:
ইচ্ছাকৃত অবহেলা: যদি কোনো করদাতা বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্ন দাখিল না করেন, তবে তার ৩ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
মিথ্যা তথ্য প্রদান: রিটার্নে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে অথবা সম্পদ গোপন করলে জেল হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
৫. অন্যান্য নাগরিক অসুবিধা (Loss of Civic Facilities): সময়মতো রিটার্ন দাখিলের ‘একনলেজমেন্ট স্লিপ’ না থাকলে আপনি সরকারি ৪৩টি সেবায় জটিলতায় পড়বেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- ২ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ নেওয়া।
- গাড়ি ক্রয় বা নিবন্ধন।
- ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন।
- ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ।
- বড় অংকের সঞ্চয়পত্র ক্রয়।
এনবিআর সময় বাড়াবে কি না—সেই আশায় বসে না থেকে দ্রুত অনলাইনে (e-Return) ফাইল জমা দেওয়াই নিরাপদ। এতে অন্তত জরিমানা ও আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
আরও পড়ুন:





