এই ডিজিটাল সুবিধা করদাতাদের সময় বাঁচাচ্ছে, স্বচ্ছতা বাড়াচ্ছে এবং কর প্রদানে উৎসাহিত করছে। (Online Income Tax Return Submission)
আরও পড়ুন:
আয়কর কাদের জন্য প্রযোজ্য (Income Tax Return Filing Procedure)
১. সর্বনিম্ন করযোগ্য আয় (Taxable Income Threshold):
- অর্থবছরে একজন পুরুষ করদাতার মোট আয় যদি বর্তমানে ৩,৫০,০০০ (তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা অতিক্রম করে।
- নারী করদাতা, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী বয়স্ক নাগরিক, বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির মোট আয় যদি বর্তমানে ৪ লাখ টাকা অতিক্রম করে।
- গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হলে মোট আয় যদি বর্তমানে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অতিক্রম করে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হলে মোট আয় যদি বর্তমানে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অতিক্রম করে।
২. টিআইএন বাধ্যতামূলক হওয়া (Mandatory TIN Requirement):
- যদি কোনো ব্যক্তি টিআইএন (TIN - Taxpayer Identification Number) গ্রহণ করে থাকেন, তবে তার আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকলেও কমপক্ষে ন্যূনতম কর (Minimum Tax) হিসেবে রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যক।
- কিছু নির্দিষ্ট কাজ বা পেশার জন্য টিআইএন থাকা এবং রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, যেমন: ব্যবসা বা পেশার জন্য ট্রেড লাইসেন্স (Trade License) প্রাপ্তি। কোম্পানির পরিচালক (Director) বা শেয়ারহোল্ডার (Shareholder) হওয়া।সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো টেন্ডারে (Tender) অংশগ্রহণ। ক্রেডিট কার্ড (Credit Card) ব্যবহার করা। গাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমি রেজিস্ট্রেশন (Registration) করা।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন কী? (What is Online Tax Return?)
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (Online Tax Return) হলো এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ঘরে বসে বা অফিস থেকে নিজের বার্ষিক আয়ের হিসাব এবং প্রদেয় করের বিবরণী দাখিল করা। এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি পেপারলেস (Paperless) এবং নিরাপদ।
আরও পড়ুন:
অনলাইন রিটার্ন দাখিলের সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা (Benefits of Online Tax Return)
সময় সাশ্রয় (Time Saving): কর অফিসে না গিয়ে যেকোনো স্থান থেকে ২৪/৭ (24/7 Service) রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
ত্রুটিমুক্ত দাখিল: অনলাইন সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব হয়, ফলে গাণিতিক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম (Error Free Submission)।
স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা (Transparency & Security): সরাসরি এনবিআর-এর পোর্টালে তথ্য জমা হয় বলে প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
রসিদ প্রাপ্তি: রিটার্ন দাখিলের পরপরই সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন রসিদ (Return Receipt) ও স্বীকৃতিপত্র (Acknowledgement Receipt) অনলাইনে পাওয়া যায়।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া (Step-by-Step Online Income Tax Return Filing)
আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করার জন্য আপনাকে এনবিআর-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি করার জন্য আপনার একটি বৈধ টিআইএন (TIN - Taxpayer Identification Number) থাকতে হবে।
ধাপ ১: নিবন্ধন ও লগইন (Registration and Login)
পোর্টালে প্রবেশ: প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত অনলাইন আয়কর রিটার্ন পোর্টালে (Online Tax Return Portal) প্রবেশ করুন।
নিবন্ধন (Registration): যদি আপনার প্রথমবার ব্যবহার হয়, তবে ‘রেজিস্ট্রেশন’ বাটন ক্লিক করুন। আপনার টিআইএন নম্বর ও ফোন নম্বর দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
লগইন: রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পোর্টালে লগইন (Login) করুন।
ধাপ ২: রিটার্নের ধরন নির্বাচন (Selecting Return Type)
নতুন রিটার্ন: লগইন করার পর ‘ফাইল নিউ রিটার্ন’ বাটনটি ক্লিক করুন।
বর্ষ নির্বাচন: যে অর্থবছরের জন্য রিটার্ন দাখিল করবেন, সেই কর বর্ষ (Assessment Year) নির্বাচন করুন।
রিটার্নের প্রকার: আপনার জন্য প্রযোজ্য রিটার্নের ধরন (যেমন: সাধারণ ব্যক্তি করদাতা, বেতনভুক্ত ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী, ইত্যাদি) নির্বাচন করুন।
ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য ও আয়-ব্যয়ের বিবরণ পূরণ (Filling Personal, Income & Expense Details)
ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information): আপনার নাম, ঠিকানা, পেশা, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
আয়ের উৎস (Source of Income): আপনার আয়ের সকল উৎস (যেমন: বেতন/Salaries, ব্যবসা/Business, বিনিয়োগ/Investment, ভাড়া/Rent, ইত্যাদি) নির্বাচন করুন এবং সংশ্লিষ্ট ঘরে সঠিক তথ্য ইনপুট দিন।
ব্যয় ও জীবনযাত্রার ব্যয় (Expenses & Living Cost): নির্ধারিত ছকে আপনার বার্ষিক জীবনযাত্রার ব্যয় (Living Expenses) পূরণ করুন।
সম্পদ ও দায় (Assets and Liabilities): আপনার মোট সম্পদ (Total Assets) এবং দায় (Liabilities) এর বিবরণ, যা রিটার্ন ফরমে চাওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৪: কর হিসাব ও বিনিয়োগ রেয়াত (Tax Calculation & Rebate)
স্বয়ংক্রিয় হিসাব: আপনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোট কর দায় (Total Tax Liability) এবং বিনিয়োগ রেয়াত (Investment Rebate)-এর পরিমাণ হিসাব করবে।
প্রদেয় কর যাচাই: সিস্টেমের দেখানো প্রদেয় করের পরিমাণ (Tax Payable) যাচাই করুন। যদি কোনো অগ্রিম কর বা উৎস কর কেটে রাখা হয়ে থাকে, সেটির সমন্বয় (Tax Adjustment) করুন।
ধাপ ৫: কর পরিশোধ (Online Tax Payment)
পেমেন্ট নির্বাচন: যদি কোনো প্রদেয় কর বাকি থাকে, তবে ‘পেমেন্ট’ অপশনটি ক্লিক করুন।
অনলাইন পেমেন্ট: আপনি ব্যাংকের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড (Debit/Credit Card), মোবাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking) (যেমন: বিকাশ, নগদ) বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি কর পরিশোধ (Online Tax Payment) করতে পারবেন।
চালান সংরক্ষণ: সফলভাবে পেমেন্ট হওয়ার পর ই-চালান (e-Challan) রসিদটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
ধাপ ৬: চূড়ান্ত দাখিল ও রসিদ (Final Submission & Receipt)
পুনরায় পরীক্ষা: চূড়ান্ত দাখিলের আগে পুরো ফর্মটি একবার ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন যাতে কোনো তথ্য ভুল না থাকে।
দাখিল (Submission): ‘সাবমিট রিটার্ন’ বা ‘দাখিল করুন’ বাটনে ক্লিক করে আপনার আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) জমা দিন।
স্বীকৃতিপত্র: দাখিল সফল হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বীকৃতিপত্র বা রসিদ (Acknowledgement Receipt) জেনারেট হবে। এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন—এটিই আপনার রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ।
আরও পড়ুন:
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (How to Submit Tax Return Online)
আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) দাখিল করার সময় নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হয়। আপনি যে ধরনের করদাতা (যেমন, বেতনভোগী বা ব্যবসায়ী) তার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিন্নতা দেখা যায়। অনলাইনে বা অফলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য সাধারণত যে সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি (Documents and Proof) আপনার প্রয়োজন হবে, তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো:
১. ব্যক্তিগত ও পরিচিতিমূলক তথ্য (Personal & Identification Info)
টিআইএন সার্টিফিকেট: আপনার ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN)-এর কপি।
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): আপনার এনআইডি কার্ডের কপি।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিবরণী: আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম, নম্বর ও শাখা (যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি লেনদেন করেন)।
২. আয়ের উৎস সম্পর্কিত প্রমাণাদি (Proof of Income Sources)
ক. বেতনভোগী হলে (For Salaried Person)
বেতনের সনদ (Salary Statement/Certificate): আপনার নিয়োগকর্তা (Employer) কর্তৃক প্রদত্ত বিগত অর্থবছরের মোট বেতন, ভাতা, বোনাস এবং অন্যান্য সুবিধার বিবরণী।
উৎসস্থলে কর কর্তনের প্রমাণপত্র (Proof of Tax Deduction at Source - TDS): বেতনের বিপরীতে আপনার নিয়োগকর্তা যে কর কেটে রেখেছেন, তার প্রত্যয়নপত্র (সাধারণত Form 16 বা অনুরূপ)।
খ. অন্যান্য আয় হলে (Other Income)
ব্যাংকের সুদ ও মুনাফা: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সুদ বা লভ্যাংশের (Dividend) বিবরণী।
বাড়ি ভাড়া আয়: ভাড়ার চুক্তিপত্র, ভাড়া প্রাপ্তির রসিদ এবং ভবন সংশ্লিষ্ট ব্যয় (যেমন মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, পৌরকর) সংক্রান্ত প্রমাণাদি।
ব্যবসা বা পেশাগত আয়: লাভ-ক্ষতির হিসাব (Profit and Loss Account), ব্যালেন্স শিট (Balance Sheet) এবং সংশ্লিষ্ট সকল ভাউচার ও রসিদ।
৩. বিনিয়োগ ও রেয়াত সংক্রান্ত প্রমাণাদি (Investment & Tax Rebate Documents)
যেসব খাতে বিনিয়োগ বা দান করলে আপনি কর রেয়াত (Tax Rebate) সুবিধা পাবেন, তার প্রমাণপত্র অবশ্যই লাগবে।
জীবন বীমার কিস্তি: জীবন বীমা পলিসির বিপরীতে দেওয়া কিস্তির রসিদ।
শেয়ার/মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ: শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র।
ডিপিএস (DPS) বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ: ডিপিএস বা সঞ্চয়পত্রে জমার প্রমাণপত্র।
কল্যাণ তহবিল/গ্র্যাচুইটি তহবিলে দান: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দান বা জমার প্রমাণপত্র।
ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান: অনুমোদিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা তহবিলে দানের রসিদ।
৪. প্রদেয় কর সংক্রান্ত প্রমাণ (Proof of Tax Payment)
চালান কপি: যদি আপনি এরইমধ্যে কোনো কর সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকেন (যেমন অগ্রিম কর বা কমপ্লায়েন্স জনিত কর), তবে ট্যাক্স চালান (Tax Challan)-এর মূল কপি।
উৎস কর কর্তনের প্রমাণপত্র: ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো উৎস থেকে আপনার আয় বাবদ কর কেটে রাখা হলে তার প্রত্যয়নপত্র (যেমন: ফিক্সড ডিপোজিটের সুদ বা সেভিংস সার্টিফিকেটের বিপরীতে TDS)।
৫. সম্পদ ও দায় সংক্রান্ত তথ্য (Assets & Liabilities Information)
যদিও এর প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয় না, তবে রিটার্ন ফরমে পূরণ করার জন্য তথ্যগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ: জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি সম্পত্তির বর্তমান মূল্য।
আর্থিক বিনিয়োগের বিবরণ: শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, নগদ অর্থ (Cash in Hand) এবং ব্যাংক জমার পরিমাণ।
মোট দায় (Total Liabilities): যদি কোনো ব্যাংক লোন (Bank Loan) বা অন্য কোনো ঋণ থাকে, তার পরিমাণ।
অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সময় এই সকল কাগজপত্র সরাসরি আপলোড করার প্রয়োজন হয় না, তবে এগুলোর তথ্য আপনাকে অনলাইন ফরমে নির্ভুলভাবে ইনপুট দিতে হবে। তাই দাখিলের আগে এই প্রমাণাদিগুলো হাতে নিয়ে বসলে কাজটি সহজে সম্পন্ন করা যায়।
সম্প্রতি আয়কর আইন, ২০২৩–এর ধারা ৩২৮ এর উপধারা (৪) অনুযায়ী, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল (Online Income Tax Return Filing) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ আদেশ নং–১/২০২৫ এর ক্রমিক নং–১ অনুসারে, এখন থেকে বিশেষ শ্রেণির করদাতা (Special Class Taxpayers) ছাড়া অন্য সব স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাকে (All Individual Taxpayers) অবশ্যই এনবিআর-এর পোর্টালের মাধ্যমে ই-রিটার্ন (E-Return) দাখিল করতে হবে। দেশের প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) রয়েছেন। ২০২৫-২০২৬ কর বর্ষের (Tax Year 2025-2026) আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় হলো আগামী ৩০ নভেম্বর (November 30)। করযোগ্য আয় থাকলে প্রত্যেক টিআইএনধারীর জন্য এই সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
করদাতাদের মনে রাখতে হবে, প্রতি বছর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ (Income Tax Return Deadline) অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ট্যাক্স ক্যালকুলেটর (Tax Calculator) ব্যবহার করে দ্রুত হিসাব করা সম্ভব। বর্তমানে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল (E-Return Filing) বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি করদাতাদের জন্য যেমন স্বস্তিদায়ক, তেমনি সরকারের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াকেও করছে আরও গতিশীল ও কার্যকর।
National Board of Revenue (NBR) FAQ e-Return PDF (https://nbr.gov.bd/uploads/news-scroller/FAQ_e-Return_-_20251.pdf)
ই-রিটার্ন (e-Return) নিয়ে করদাতাদের সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন কী? এটি কি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে?
উত্তর: ই-রিটার্ন (e-Return) হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর - NBR) এর নির্ধারিত পোর্টালে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (Online Income Tax Return) দাখিল করা। হ্যাঁ, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী এনবিআর বিশেষ শ্রেণির করদাতা ছাড়া অন্য সব স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার জন্য ই-রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে।
প্রশ্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ কবে? (Income Tax Return Deadline)
উত্তর: ২০২৫-২০২৬ কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হলো আগামী ৩০ নভেম্বর। এই সময়ের মধ্যে সকল টিআইএনধারীকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
প্রশ্ন: টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দাখিল করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, টিআইএন (TIN) থাকলেই এখন সাধারণত আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিলের জন্য আমার কী কী প্রয়োজন হবে? (e-Return Necessary Documents)
উত্তর: অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে: টিআইএন নম্বর (TIN Number), এনআইডি (NID), আয় সংক্রান্ত সকল প্রমাণপত্র (যেমন বেতনের সনদ, ভাড়ার রসিদ), বিনিয়োগ বা রেয়াতের প্রমাণপত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী এবং পূর্ববর্তী বছরের সম্পদ ও দায় সংক্রান্ত তথ্য।
প্রশ্ন: কীভাবে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য নিবন্ধন (Registration) করব?
উত্তর: আপনাকে এনবিআর-এর অনলাইন আয়কর রিটার্ন পোর্টালে (Online Tax Return Portal) প্রবেশ করতে হবে। সেখানে 'রেজিস্ট্রেশন' অপশন ক্লিক করে আপনার টিআইএন নম্বর ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
প্রশ্ন: অনলাইনে আয়কর দাখিল করার পর কর পরিশোধ (Tax Payment) কীভাবে করব?
উত্তর: অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের পর সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের হিসাব করবে। প্রদেয় কর আপনি সরাসরি অনলাইনে পরিশোধ (Online Tax Payment) করতে পারবেন, যেমন: ব্যাংক ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ) এর মাধ্যমে।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিল করার পর প্রমাণপত্র কীভাবে পাব? (Return Receipt)
উত্তর: সফলভাবে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি অনলাইনে একটি স্বীকৃতিপত্র বা রসিদ (Acknowledgement Receipt) পাবেন। এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করাই আপনার রিটার্ন দাখিলের বৈধ প্রমাণ।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিল করলে কি কোনো সুবিধা পাওয়া যায়? (Benefits of E-Filing)
উত্তর: হ্যাঁ। ই-ফাইলিং (e-Filing)-এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো: সময় সাশ্রয় (Time Saving), গাণিতিক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম (Error Free Submission), এবং স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি।
প্রশ্ন: করযোগ্য আয় না থাকলে কি রিটার্ন দাখিল করতে হবে?
উত্তর: যদি আপনার আয় সর্বনিম্ন করযোগ্য সীমার নিচে থাকে, কিন্তু আপনি টিআইএন (TIN) গ্রহণ করে থাকেন, তবে আইন অনুযায়ী আপনার জন্য ন্যূনতম কর (Minimum Tax) প্রদান করে হলেও রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যক।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিল না করলে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে? (Penalty for Not Filing e-Return)
উত্তর: বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও যদি কোনো করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-রিটার্ন দাখিল (e-Return Submission) না করেন, তাহলে আয়কর আইন অনুযায়ী তার ওপর জরিমানা (Penalty) বা অন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ হতে পারে।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিলের জন্য কি ট্যাক্স ক্যালকুলেটর (Tax Calculator) ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, এনবিআর-এর অনলাইন পোর্টালে (NBR Online Portal) রিটার্ন পূরণ করার সময় সিস্টেমটিতেই একটি স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স ক্যালকুলেটর (Tax Calculator) যুক্ত থাকে, যা আপনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রদেয় করের পরিমাণ হিসাব করে দেয়।
প্রশ্ন: প্রথমবার যারা রিটার্ন দাখিল করবেন, তাদের জন্য কি কোনো বিশেষ সুবিধা বা নির্দেশনা আছে?
উত্তর: প্রথমবার যারা আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) দাখিল করছেন, তাদের এনবিআর পোর্টালে নিবন্ধন করে ধাপে ধাপে তথ্য পূরণ করতে হবে। এনবিআর-এর পোর্টালে নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য সহায়ক নির্দেশিকা বা ইউজার ম্যানুয়াল (User Manual) দেওয়া থাকে।
প্রশ্ন: অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সময় কোনো ভুল হলে তা কি সংশোধন করা সম্ভব? (Can I Revise My Online Return)
উত্তর: রিটার্ন একবার চূড়ান্ত দাখিল (Final Submission) করার পর সাধারণত সরাসরি পোর্টালে পরিবর্তন আনা যায় না। তবে কর আইন অনুযায়ী সংশোধিত রিটার্ন (Revised Return) দাখিলের বিধান রয়েছে। এর জন্য কর অফিসে যোগাযোগ করতে হতে পারে।
প্রশ্ন: আমার যদি টিআইএন থাকে, কিন্তু আয় করযোগ্য সীমার নিচে, তাহলেও কি ই-রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি আপনি টিআইএন (TIN) গ্রহণ করে থাকেন, তবে আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকলেও আপনার জন্য ন্যূনতম কর (Minimum Tax) দিয়ে হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য কি বিশেষ কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে? (Does NBR have a Software)
উত্তর: না, এনবিআর-এর অনলাইন রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া (Online Return Filing Procedure) একটি ওয়েব পোর্টালভিত্তিক সিস্টেম। তাই আপনার পিসি বা ফোনে নতুন করে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড (Software Download) করার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন: ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ায় আমার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা কেমন? (Data Security in e-Return)
উত্তর: এনবিআর-এর অনলাইন পোর্টালটি কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে। এটি সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আর্থিক তথ্যের নিরাপত্তা (Financial Data Security) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে কি বিনিয়োগ রেয়াত (Investment Rebate) পাওয়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি আপনার যোগ্য বিনিয়োগের প্রমাণপত্র (Investment Proof) অনুযায়ী অনলাইনে রিটার্ন ফরমে তথ্য ইনপুট দিলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার প্রাপ্য কর রেয়াত (Tax Rebate) হিসাব করে দেখাবে।
প্রশ্ন: বিদেশী আয় (Foreign Income) থাকলে কি অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আপনার যদি বৈধ বিদেশী আয় (Foreign Income) থাকে, তবে আপনি সেই আয়ের বিবরণ রিটার্ন ফরমে পূরণ করে অনলাইনে ই-রিটার্ন (Online e-Return) দাখিল করতে পারবেন।
প্রশ্ন: অনলাইনে কর পরিশোধের পর কি চালান কপি সংরক্ষণ করা জরুরি?
উত্তর: অবশ্যই। অনলাইনে কর পরিশোধ (Online Tax Payment) সফল হওয়ার পর যে ই-চালান (e-Challan) জেনারেট হয়, সেটি আপনার কর পরিশোধের প্রাথমিক প্রমাণপত্র (Primary Proof)। এটি অবশ্যই ডাউনলোড ও সংরক্ষণ করতে হবে।





