গোটা ডিসেম্বর জুড়ে ‘গ্রে জোনে’ সামরিক মহড়া ইস্যুতে সাপে-নেউলে অবস্থানে তাইওয়ান ও চীন। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ওকিনাওয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপিন্সের মধ্যে সংযোগকারী ফার্স্ট আইল্যান্ডে চীনা কোস্টগার্ড ও যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা গেল বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক বেশি। যদিও বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, নিজেদের প্রয়োজনে তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন, ভবিষ্যতেও সামরিক মহড়ার এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন উত্তর কোরিয়া আর চীনের বিরুদ্ধে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় জোট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তখন তাইওয়ানের নতুন মাথা ব্যথার কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিগত শাসনামলে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সে ভোল পাল্টেছে ২০২৪ এর নির্বাচনী প্রচারে। একাধিকবার বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানের উচিৎ ওয়াশিংটনকে আরও বেশি মূল্যায়ন করা। অভিযোগ করেন এই তাইওয়ানের কারণেই মাইক্রো চিপের বাজার হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী তাইওয়ানকে নিরাপত্তা দেয়া ও এই ইস্যুতে চীনের সাথে বিরোধে জড়ানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না ট্রাম্প। বিশেষ করে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের পর তাইপে যদি মনে করে ওয়াশিংটন ভবিষ্যতেও তাদের ঢাল হয়ে দাঁড়াবে, তা চূড়ান্ত বোকামি হবে।
ট্রাম্পের এমন মনোভাবকে হালকাভাবে না নিলেও ওয়াশিংটন-তাইপে সম্পর্কের ব্যাপারে আশাবাদী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। তাইওয়ানের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের মধ্যেই গেল মে মাসে শপথ নেন তিনি।
একাধিকবার বলেছেন, ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ধরে রাখা অঞ্চলটির সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। তাইপের ৩ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলাপের পর সিএনএন জানায়, স্পর্শকাতর কোনো ইস্যুতে আলোচনার জন্য দু'পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রয়েছে। এখনই কোনো ফলে পৌঁছানোর আবশ্যকতা নেই।
তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম ভূখণ্ড দাবি করলেও, চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের অংশ। স্বায়ত্বশাসিত এই অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগেরও হুংকার দিয়ে আসছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সামরিক চুক্তির কারণে বারবার এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে বেইজিং। বিশেষ করে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে পুরো প্রণালীজুড়ে মহড়া বাড়ায় দেশটি। যদিও শেষ পর্যন্ত এ দুইদেশের উত্তেজনার পারদ কতটা চড়বে তা নির্ভর করছে ট্রাম্প পলিসির ওপর।