যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

সংঘাত বন্ধ হলেও লেবানন চলে গেছে কয়েক দশক পেছনে

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত বন্ধ হলেও চরম ক্ষয়ক্ষতিতে লেবানন যেন চলে গেছে কয়েক দশক পেছনে। দেশকে নেতৃত্ব দেয়া সশস্ত্র যোদ্ধা হিজবুল্লাহ'ও পড়ে গেছে নেতৃত্ব, অর্থ, সমরাস্ত্র আর সেনা সংকটে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই দেশ পুনর্গঠনে প্রয়োজন ৮৫০ কোটি ডলার। অন্য কোনো আরব দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা কম থাকায় হিজবুল্লাহ অর্থ সহায়তার জন্য তাকিয়ে রয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশ ইরানের দিকে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যারা লেবানন আর গাজার হয়ে যুদ্ধ করছিল ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে, অনেকের শরীর এখনও চাপা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহ'কে এখন ইসরাইলের বীভৎসতা মাটি চাপা দিয়ে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে দলকে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। পূরণ করতে হবে নেতৃত্বের অপূরণীয় শূন্যতা।

সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, গেলো ১৪ মাসে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে হিজবুল্লাহ'র হাজারো যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেকগুলো সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সংঘাতে চার হাজার ইরান সমর্থিত সশস্ত্র যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। যা ২০০৬ সালের লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।

এই ধাক্কায় লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ চরম ধাক্কা খেয়েছে। দলের নেতা সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ নিহতের পর থেকে পুরোপুরি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্রমাগত হামলায় তার সমর্থকেরা হয়ে পড়েছেন বাস্তুচ্যুত।

এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর হিজবুল্লাহ'র প্রথম এজেন্ডা হয়ে পড়েছে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। পাশাপাশি ইসরাইলের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করে যে ভুল হিজবুল্লাহ করেছিল, সেটি শুধরে নেয়ারও কাজ করবে গোষ্ঠীটি।

হিজবুল্লাহ'র জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, তাদের প্রথম গুরুত্ব এখন সাধারণ মানুষের পুনর্বাসন। পাশাপাশি শহীদদের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে বের করে তাদের সৎকার করা। ইসরাইলের এই আগ্রাসনে এক বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, হিজবুল্লাহকে পুনরায় সংগঠিত করতে সময়ের প্রয়োজন।

কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহ তাদের সংগঠনে এখন নীতিগত অনেক পরিবর্তন আনবে। তেহরান কথা দিয়েছে, এই সংগঠন পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে তারা। কিন্তু ক্ষতিপূরণটা মোটা অঙ্কের। বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু লেবাননের আবাসন খাত পুনর্গঠনেই খরচ পবে ২৮০ কোটি ডলার, যেহেতু দেশটির ৯৯ হাজার ঘরবাড়িই আংশিক বা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

অন্যদিকে ইসরাইলে হামলা শুরুর পর থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সম্মুখসারিতে থাকা গ্রামবাসীকে মাসে ২০০ ডলার করে দিচ্ছে সশস্ত্র এ সংগঠনটি। কিন্তু সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে মাসে ৩০০ ডলার করে দিচ্ছে হিজবুল্লাহ। এর আগে ২০০৬ সালে ইরান থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেশ পুনর্গঠনে পেয়েছিলো সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, লেবানন পুনর্গঠনে প্রয়োজন সাড়ে ৮০০ কোটি ডলার। এই অর্থ সরকারের একার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব না। এরমধ্যেই গেলো পাঁচ বছর ধরে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালে গাল্ফভুক্ত দেশগুলো লেবাননকে ৫০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। একই কাজ সুন্নি অধ্যুষিত আরব রাষ্ট্রগুলো আবারও করবে কি না, সেই নিশ্চয়তা নেই। যে কারণে হিজবুল্লাহ সবদিক থেকে ইরানের ওপর নির্ভরশীল।

এসএস