দেশে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহে। মোট উৎপাদনের ১২ ভাগ মাছ আসে এ জেলা থেকে। আর শুধু পাঙ্গাস বিবেচনা করলে মোট উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন হয় এই জেলায়।
বর্তমানে প্রায় সবক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। মৎস্য শিল্পই বা বাদ থাকবে কেন? এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে মাছ চাষে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ত্রিশালের আহাম্মদাবাদ গ্রামের একটি সরকারি পুকুরে নতুন এই পদ্ধতিতে চাষ করা হয় পাঙ্গাস মাছ।
পুকুরপাড়ের চারপাশে রাখা আছে খাবার ছিটানোর চারটি যন্ত্র। অক্সিজেন সাপ্লাই বাড়ানোর জন্য পানির নিচে ও উপরে স্থাপন করা হয়েছে আট ধরনের আটটি এয়ারেটর এবং সেন্সর। এর সবই পরিচালনা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি। প্রয়োজন অনুসারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হচ্ছে যন্ত্রগুলো। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক অ্যাকুয়াকালচার ৪.০ প্রযুক্তির অটোমেশন ডিভাইস ও ভার্টিকাল এক্সপানশন প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহারে পুকুরের সামগ্রিক জলমান ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
টেকনিক্যাল এক্সপার্ট রনি সাহা বলেন, 'এটা ব্যবহারের ফলে ম্যানুয়েল লেবার বা কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমে যায়। আর দ্বিতীয়ত এআই ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক কমে যায় আমাদের।'
বিশ্বাস অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রশাসনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় ওই পুকুরে মাছ চাষ করছে। এই পদ্ধতিতে বেড়েছে উৎপাদন, কমেছে খরচ। পাশাপাশি নেই রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ।
ময়মনসিংহ ত্রিশালের বিশ্বাস এগ্রোর ডিজিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, 'যেখানে আমরা নরমালি ১৫০ থেকে ২৫০ কেজি উৎপাদন পেয়ে থাকি। আর এখানে আমাদের কালচার ডিউরেশন ছিল সাত মাস। এই সাত মাসের মধ্যে যে পরিমাণ আমরা উৎপাদন পেয়ে গেছি, আমার মনে হয় বাংলাদেশের এই প্রথম এত বেশি উৎপাদন করতে পেরেছি।'
ময়মনসিংহ ত্রিশালের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুজ্জামান বলেন, 'নরমাল প্রক্রিয়ায় সবাই রোগব্যাধি ফেস করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের খরচের একটা বিষয় চলে আসে। আর এই পদ্ধতিতে রোগব্যাধির কোনোকিছু আমরা এখনও পাইনি।'
অল্প জমিতে অধিক মাছ চাষ করে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বলছেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
জুয়েল আহমেদ বলেন, 'আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে মিটিংয়ে একটি সিদ্ধাাত নিয়েছি যে আমরা এটি সম্প্রসারণ করবো। অর্থাৎ চাষি পর্যায়ে সচেতনতা করা এবং একই সাথে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে সফল চাষি নির্বাচন করে পুকুরে তার বাস্তবায়ন করবো।'
এক একর জমির একটি পুকুরে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সেন্সর ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সামগ্রী ক্রয় ও ইনস্টলমেন্টে খরচ হবে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।