রাজনীতিতে ঐক্যের মরীচিকা: আলোচনার টেবিল ছেড়ে বিতর্কেই সময় পার!

রাজনৈতিক দলের নেতারা
রাজনৈতিক দলের নেতারা | ছবি: এখন টিভি
1

রাজনীতির ময়দানে ঐক্য যেন মরীচিকার মতো। আলোচনার টেবিল ছেড়ে বিতর্কেই সময় পার করছেন রাজনৈতিক দলগুলো। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আর গণভোটের সময় নিয়ে ঐকমত্যে সুর মিলবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের চেয়ে জনগণের স্বার্থকেই গুরুত্ব দেয়া উচিত।

মাঠে-ময়দানে, সেমিনারে চলছে কথার লড়াই, পাল্টাপাল্টি মন্তব্য। নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অভিধানে। নিজেদের অনড় অবস্থানের পক্ষে এভাবেই সওয়াল করছেন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করবো। ঘি আমাদের লাগবেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঋণ করে ঘি খেতে চান, খান। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের এ ময়দানকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর থাকতে দেবো না।’

পিআর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? গণভোটের দিনক্ষণই বা কবে? এসব প্রশ্নে আলোচনা ছেড়ে রাজপথে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান জামায়াতের, আর ঠিক উল্টো অবস্থানে বিএনপি। যেন এক বিন্দুতে পৌঁছানো পাহাড় ডিঙানোর মতোই কঠিন কাজ।

রাজনৈতিক দলগুলোর রোজকার কথায় স্পষ্ট হচ্ছে অনৈক্যের সুর। এমন বাস্তবতায় শুরু হয়ে গেছে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ডামাডোল। তবে কি নির্বাচনী রেলে চেপে গন্তব্যে পৌঁছানোর সংকল্পে ঐক্যের সুর বাজবে না?

এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের চেয়ে জনগণের চাওয়াকেই এগিয়ে রাখতে হবে রাজনীতিবিদদের। পাশাপাশি রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতাদের শব্দচয়নে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ রাষ্ট্র যে নাগরিকের, সে অনুধাবন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব সামান্যই আছে। সিনিয়রদের উচিত হলো সব সময় সংযত থেকে কথা বলা। আমরা তো একটা ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন:

একদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতি অন্যদিকে সংস্কার। রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থান ভোটের ময়দানকে করে তুলেছে অস্থির। সংকট সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছাতে বড় দলগুলোকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘এটি এমন কোনো অনতিক্রম সমস্যা নয় যে, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী একত্রে বসলে সমস্যার সমাধান হবে না। এরকম কিছু না। তবে আমার মনে হয় জিদের একটা অবস্থা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ময়দানে জিদাজিদি তো সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

এরই মধ্যে আলোচনার টেবিলে বসতে জামায়াতের আহ্বান নাকচ করেছে বিএনপি। তবে রাজপথের দখল নিতেও মরিয়া উভয় দল। যা উত্তপ্ত সময়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের স্বার্থে বদলাতে হবে পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

আরও পড়ুন:

আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘জনগণের রাজনীতির যে প্রবণতা সেটা এ জনমনস্তত্ব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এটা আগে মনে রাখলে আমাদের আর ঝামেলা হবে না।’

অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রকে সামনে রেখে নয়।’

ক্ষমতার লোভ-লালসা আর দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যের সুরে সুর মেলাবেন রাজনীতিবিদরা। নানা পথ, নানা মত মিলবে একই মোহনায়-প্রত্যাশা দেশবাসীর।

এসএস