মধ্যরাতে মহাসড়কে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তার হিসেব ঠিকঠাক হয়তো নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও। কখনও ট্রাক দাঁড় করিয়ে অথবা গাছ ফেলে রাস্তা রোধ করে ডাকাতরা। এরপর একে একে ছিনিয়ে নেয় সব। কৌশলে কেউ কেউ পার পেলেও পুলিশের কাছে অভিযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিচার।
ঠিক দেড় মাস আগের আরেকটি ঘটনা। র্যাব পরিচয়ে মহাসড়করে গাড়ি থেকে এক প্রবাসীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেশের মানুষের কাছে।
এছাড়া ছিনতাই, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য, শয়তানের নিশ্বাসের নামে বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে সব হাতিয়ে নেয়ার চক্রের রমরমা অবস্থা।
দেশে কোন কোন স্থানগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? খুঁজে দেখতে চায় এখন টেলিভিশন। কথা বলতে চায় বাস চালকদের সাথে। অনেকের জীবনেই আছে ভয়ের স্মৃতি।
বাসচালকদের মধ্যে একজন বলেন, 'হেমায়েতপুর থেকে তিনজন চাঁপাইয়ের কথা বলে উঠেছিল, আবার সাভার থেকে দুইজন উঠেছে নাটোরের কথা বলে। দেড় ঘণ্টা পার হওয়ার পরই গাড়ি সাইড করতে বলে। হাতে চাকু দিয়ে পোস দিয়েছিল, পরে ওরা গাড়ি চালিয়ে গিয়ে রাস্তায় সাইড করে নেমে গিয়েছিল।'
কীভাবে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি করে সে কৌশলও এখন জানা সবার।
একটি বাসের সুপারভাইজার বলেন, 'সাতক্ষীরা থানার ওসি অলরেডি বলে দিয়েছে যে, রাতে কোনো যাত্রী স্টপেজ ছাড়া রাস্তায় না নামানো জন্য। ডাকাতি, ছিনতাই বা সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ড হলে প্রশাসন দায়ী থাকবে না।'
দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চালকরা চিহ্নিত করেছেন আগেই। তবে সেই স্থানগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পুলিশের পাহাড়া। নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছে সাধারণ যাত্রীরাও।
চালকদের মধ্যে একজন বলেন, 'আগে যেরকম রাস্তায় লোক ছিল, এখন হাইওয়ে পুলিশ তেমন রাস্তায় দেখো যায় না। তারা যদি রাস্তায় সচেতন থাকে, তাহলে রাস্তায় কোনো বিশৃঙ্খলা বা এমন কোনো ডাকাত দল ডাকাতি করতে পারবে না।'
যাত্রীদের মধ্যে একজন বলে, 'রাস্তাঘাটে চলাচল করতে হয়, এখন যদি আমরা আমাদের নিরাপত্তাটা না পাই এটা তো আসলে চিন্তার বিষয়।'
হাইওয়ে পুলিশ বলছে সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছে তারা। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কাছে চেয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। দেশের ২৭ হাজার কিলোমিটার হাইওয়ের মাত্র তিন হাজার কিলোমিটার হাইওয়ের পাড়ার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। বাকিগুলো অরক্ষিত।
হাইওয়ে পুলিশ প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, 'কিছু কিছু এলাকা আছে, অপরাধপ্রবণ এলাকা। আমরা এটুকু চিহ্নিত করেছি। আমাদের জনগণের যেহেতু স্বল্পতা আছে, স্বল্পতা নিরসন কল্পে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ৭০০ এর মতো জনবল পেয়েছি। এরইমধ্যে আমাদের প্রায় তিন হাজার ৬০০ এর মতো জনবল কাজ করছে মাঠে।'
হাইওয়েতে ডাকাতি ও অপরাধের কথা মাথায় রেখে আগেই প্রস্তুতি সভা করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তারা বলছে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে পাহারা বাড়াবে তারা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, 'হাইওয়েতে যে ডাকাতি হয়, এটার জন্য আপনারা (হাইওয়ে পুলিশ) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিবেন। এবং হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এবং রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হবে।'
ঈদে মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনী ও র্যবের সদস্যরাও মহাসড়কে থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'এটা যেন ভবিষ্যতে না হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঢাকা থেকে রাজশাহী জোনে এই ডাকাতির সংখ্যাটা একটু বেশি। টাঙ্গাইলের এখানেও একটুখানি বেশি। এগুলো যেন না হয় সেজন্য ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আছে, তাদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।'
৯৯৯ সেবা কার্যকর ভূমিকা রাখলে মহাসড়কে অপরাধ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মত সাধারণ মানুষের।