গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। যেখানে রাষ্ট্র মেরামতের মূল কাঠামো সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলে মতানৈক্য।
এরই মধ্যে গেল ১৫ জানুয়ারি সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে ১৫ দিন পার হলেও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শনিবার এক সেমিনারে বক্তারাও এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। স্বৈরতন্ত্র ঠেকাতে রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন দরকার হলেও বিপ্লবের ঘোষণাপত্র না আসায় বর্তমান সরকার তা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, 'বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন তাদের কাছে চলে এসেছে। কিন্তু একটিও বাস্তবায়ন তারা করতে পারবে না। তারা এগুলো রেখে চলে যাবে। এবং পরবর্তী সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করবে কী করবে না তার কোনো গ্যারান্টি থাকবে না। বিপ্লবের মাধ্যমে যে ক্ষমতাসীন সরকার থাকে, যে লিগ্যাল অর্ডারটা থাকে, সেটা পরিবর্তন হয়ে যায়।'
অনুষ্ঠানে কথা বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মাধ্যমে দেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের পথ খুলে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জানান, শেখ মুজিবের প্রতিষ্ঠিত স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনে তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, '১৯৭২ সালে তৈরি করা সংবিধানের মধ্য দিয়ে, যেদিন ওই সংবিধান গৃহীত হয়েছে সেদিন থেকেই বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান দুইবার পুনর্লিখিত হয়েছে কোনোরকম ম্যান্ডেট ছাড়া এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, স্বার্থের বিরুদ্ধে।'
শুধু ব্যক্তির অবসান নয়, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে কাঠামোগত পরিবর্তনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, 'শুধু ব্যক্তির অপসারণ নয়, কাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন গণতন্ত্রায়ণের যে সুযোগ রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে, প্রাণ দিয়ে তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত নেই। আসুন, আমরা সে জায়গায় এক থাকি। সংকট অনেক বড় এই কারণে যে এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো হবে না। সকলের অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে সেটা সম্ভব। সেটাই গণতন্ত্র। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেটাই একমাত্র পথ।'
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারসহ সংবিধানে গণভোট বহালসহ বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন করার বিষয়েও মত দেন ড. রিয়াজ।