সরকার ১১টির বেশি কমিশন গড়লেও শিক্ষায় হাত দেয়নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফিজুর রহমান ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফিজুর রহমান ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য | ছবি: এখন টিভি
0

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান সরকার ১১টির বেশি কমিশন কমিটি গড়েছে। কিন্তু ছাত্র-যুব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা বৈষম্যবিরোধী এই সরকার শিক্ষায় হাত দিতে পারেনি। এটা তো আমাদের জাতীয় ব্যর্থতার একটা বিষয়। আজ (মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল) সকালে সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সামনের নির্বাচনীর ইশতিহারে রাজনৈতিক দলগুলোকে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় জোর দেয়ার তাগিদ দেন ফেলো। সিপিডির পক্ষে তিনি অভিযোগ করেন, আগের সরকারের মত এখনও দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা অবহেলিত অবস্থায় আছে।

জাতীয় শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসাব বলছে, দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৬৫টি। এর মধ্যে সরকারি ৮৬৬টি ও বেসরকারি ৫ হাজার ৯৯৯টি। এতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার। ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর এই শিক্ষার্থী গোষ্ঠীকে টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করাও এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক। তবে তার খুব একটা বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শিক্ষা বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ ছিল। তাই নানা সমস্যায় এই খাতে দেখা দেয় অস্থিরতা। যার ফলস্বরূপ আন্দোলনের নামে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। আর চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে টানা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণাও করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।

এসব বাস্তবতার মাঝে কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।

এতে উঠে আসে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় টাস্কফোর্স কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে জোর দিলেও এই খাত নিয়ে বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেই আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা বিরাজ করি, সেখানে এই খাতটি পক্ষপাতদুষ্টতা, বৈষম্য, অবহেলার শিকার হিসেবে রয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার কী হবে, দেখা যাবে। কিন্তু তার চেয়ে বড় হলো নির্বাচনে যারা যাচ্ছেন, নির্বাচনের যে রাজনৈতিক ইস্তেহার হবে, সেখানে অবশ্যই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে স্থাপন করতে হবে। সেখানে শুধু ৩ থেকে ৫ শতাংশ জিডিপি যদি শিক্ষাখাতে দেয়ও, তার মধ্যে কত শতাংশ বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় যাবে, এ কথা যদি না বলি, তাহলে গালভরা ৫ শতাংশ জিডিপি দিয়ে আমার মন ভরবে না।’

এদিকে বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান। এই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপে যেতে হবে, সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততাও বাড়াতে হবে।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যখন বাজার সুবিধা থাকবে না, তখন আমার প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ড্রাইভারটা কী হবে? দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা। এর বাইরে তো আমি আর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা করতে পারবো না। সেটা করতে গেলে আমাদের এই দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ মিড লেভেল প্রফেশনাল করতে হবে।’

এ ছাড়াও ট্রাম্পের বৈষম্যমূলক আচরণে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নতি করতে হলে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা বড় নিয়ামক হতে পারে বলেও মনে করেন আলোচকরা।

এসএইচ