সারাদেশের সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি অবকাঠামো গড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এসব খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয় অহরহ। এছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এপিএসের দুর্নীতির খবর স্থান পেয়েছে গণমাধ্যমের শিরোনামে।
এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে হানা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ঢাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় জেলার ঘূর্ণিঝড় রোধে অনুমোদন পাওয়া এক হাজার ৯০৯ কোটি টাকা প্রকল্পের বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে আসে দুদক। অভিযানে ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, সোলার স্ট্রিট লাইটের মতো যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অস্বাভাবিক দাম নির্ধারণের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বলেন, 'আপাত দৃষ্টিতে আমাদের কাছে ল্যাপটপের দামটা একটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। এরকম বিভিন্ন বিষয় আছে।'
এদিকে বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের এলজিইডি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তিন বান্ডেল নথিপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যায় দুদক। চট্টগ্রামে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, নামে বেনামে ঠিকাদারদের বিল তৈরি ও কাজ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনেন দুদকের দল।
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজউদ্দিন বলেন, 'অফিসের ফাইল ওয়ার্ক আমরা ঠিকমতোই পেয়েছি। এখন সরেজমিনে দেখতে হবে বিল যতটুকু দিয়েছে কাজ হয়েছে কি না ততটুকু। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। ওইটা করার পর বোঝা যাবে যে কোনো অতিরিক্ত পেমেন্ট হয়েছে কি না।'
রাজশাহীর এলজিইডি কার্যালয়ে আরো ভয়াবহ অসঙ্গতি পেয়েছে দুদকের অভিযানকারী দল। সরকারি উন্নয়ন কাজ প্রথম পক্ষের পরিবর্তে তৃতীয় ও চতুর্থ পক্ষের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর প্রমাণ মেলে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
দুদকের রাজশাহী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, 'ঘুষের বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ঘুষের প্রমাণ পাইনি। তবে প্রতিটি নথি আমরা পর্যালোচনা করে আমরা যেটা পেলাম তা হচ্ছে ঠিকাদার কাজ পেয়ে আসলে অন্যকেউ কাজ করছেন। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই এই অনিয়মগুলো হচ্ছে।'
রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা মূল ঠিকাদারকেই সাইট হস্তান্তর করেছি। সাইট অর্ডার বুক আছে। আমরা মূল ঠিকাদারের সাথেই কথা বলি, পেমেন্টও মূল ঠিকাদারের কাছেই যায়।'
এদিকে জামালপুরে খাল পুনঃখনন প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ন-দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে দুদক। আর টাঙ্গাইল জেলা এলজিইডি কার্যালয়ে গিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিল উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযান চালানো হয়েছে গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ আরো বেশ কিছু জেলা উপজেলায়।
এলজিইডির বিভিন্ন কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা নথি বিশ্লেষণ ও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় দুদকের অভিযানকারী দলগুলো।