'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।' কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতায় বাংলার যে রূপ কল্পনা করেছেন, তার প্রায় সবকিছুই দেখায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা বরগুনার প্রকৃতি।
একদিকে বঙ্গোপসাগর আরেক দিকে সুন্দরবন। প্রকৃতি যেন উদার মায়ায় ডাকছে দেশের দক্ষিণে।
তালতলীতে যেমন রয়েছে রাখাইন ঐতিহ্যের নিদর্শন, শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত তেমনি হাজার বছরের মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে বেতাগীতে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিবিচিনি শাহী মসজিদ।
পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বরের বুকে জেগে ওঠা ছোট ছোট স্নিগ্ধ দ্বীপবন কিংবা দেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরির অপার সৌন্দর্য মুহূর্তেই মুগ্ধ করে পর্যটককে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় হরিণঘাটা আছে, তারপর তালতলীতে যে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত এবং টেংরাগিরি ইকোপার্ক রয়েছে। এবং এছাড়াও কিন্তু রাখাইন পল্লি রয়েছে, বলতে গেলে বরগুনাতে পর্যটন সম্ভাবনা অনেক। বরগুনাকে আরও সুন্দর করে সাজানো গেলে এখানে বিদেশি পর্যটকও আসবে।'
বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে দেশের পর্যটন অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাব ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সম্ভাবনার বিকাশ হয়নি।
একজন পর্যটক বলেন, 'বরগুনার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। এছাড়াও হোটেল, মোটেলের ভালো ব্যবস্থা নেই। এখানে আসতে একটা ব্রিজ পার হতে হয়। প্রায় দুই তিন বছর হচ্ছে ব্রিজের কাজ হচ্ছে কিন্তু এখনও ঠিক হয়নি।'
বরগুনায় ঘুরতে যাওয়া সাংবাদিক রাকিবুল রাহাত বলেন, 'বরগুনার ইকো ট্যুরিজমের সম্ভাবনা কিন্তু বেস্ট। যেহেতু এখানে ম্যানগ্রোভ আছে, সমুদ্র আছে, বড় বড় নদী আছে। সেক্ষেত্রে পর্যটন করপোরেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি আরও জোর দেয়া উচিত।'
বরগুনা পর্যটন উদ্যোক্তা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, 'এইসব স্নিগ্ধ দ্বীপবন, বিস্তীর্ণ জল মোহনা, সুন্দরবন এবং কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত একসঙ্গে দেখার সে সুযোগ সেটা বরগুনায় সম্ভব। সে জায়গা থেকে আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে উদ্যোক্তা বাড়ানো।'
ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় ২০টির বেশি পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব স্পটে যোগাযোগ সহজতর করার পাশাপাশি জেলার পর্যটন শিল্পের প্রসারে পদক্ষেপের আশ্বাস জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের।
তিনি বলেন, ' জেলা প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোক্তা কিছু পর্যটন স্পট উন্নয়ন করার কাজ করছে। এছাড়াও যারা বেসরকারি উদ্যোক্তা আছে তাদের উৎসাহিত করছি এবং তারাও এরইমধ্যে বেশকিছু পর্যটন স্পট গড়ে তুলেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অবকাঠামোগত সমস্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। এগুলোর সমাধান করা আমার মনে হয় দীর্ঘমেয়াদি।'
জেলায় নতুন করে পর্যটন সম্ভাবনায় আশার আলো দেখাচ্ছে ইকো ট্যুরিজম। গড়ে উঠেছে টেংরাগিরি, হরিণঘাটা ও সুরঞ্জনা ইকো পার্ক।