ফেনীর ফুলগাজী বাজারের 'পাল চাল ভাণ্ডার'। গেল মঙ্গলবার (৩ জুলাই) সারাদিনের বিকিকিনির পর রাতে দোকান বন্ধের আগে হঠাৎই আসে বন্যার পানি। বাজারের রাস্তা মাড়িয়ে পানির পরিমাণ দাঁড়ায় বুক সমান।
ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে দোকানে থাকা ১২ লাখ টাকার বেশি চাল ভিজে একাকার। বুধবার সকালে পানি কমলেও ভেজা চালে দুর্গন্ধ ছড়ায়। যা এখন বিক্রির অনুপযোগী। এক রাতের বন্যার পানিতে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা দোকান মালিক।
প্রতি বর্ষা মৌসুমে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের লাখো মানুষকে বানের জলে ভাসতে হয়। ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায় মুহুরী, কহুয়া নদীর বাঁধ। বন্যায় ভেঙ্গে গেছে রাস্তা ঘাট। তলিয়ে গেছে আমনের বীজ তলা। অর্ধশতাধিক পুকুরের ৬০ লাখ টাকার বেশি মাছ ভেসে গেছে বানের জলে।
বানবাসীদের একজন বলেন, 'কৃষক খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিকভাবে নদী সংস্কার হচ্ছে না। বীজতলা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।'
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, 'এ মুহূর্তে সাড়ে তিন হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা আর গ্রীষ্মকালীন সবজি হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। ২-৩ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে এগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।'
প্রতিবছর বন্যা এলে সমস্যা সামনে নিয়ে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস মিললেও বাস্তবে তা মুখ দেখে না। তবে এবার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে স্থায়ী বাঁধের আশ্বাস দিয়েছেন খোদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, 'ফিজিবিলটি স্টাডি শেষ হয়ে গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই আমরা কপি পেয়ে যাবো। আগামী ২ মাসের মধ্যে এটিকে একনেকে উঠানোর চেষ্টা করবো। আগামী বর্ষা আসার আগেই কাজ শুরু হবে।'
২০১১ সালে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর ১২২ কিলোমিটারে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। পরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত হয়। এরপর প্রতিবছরই ভাঙে বাঁধের বিভিন্ন স্থান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, মাছ ও ফসলি জমি।