দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০০

শ্রীলঙ্কায় বন্যা পরিস্থিতি
শ্রীলঙ্কায় বন্যা পরিস্থিতি | ছবি: আল জাজিরা
0

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিখোঁজ অনেকে। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় প্রাণ গেছে অন্তত ৮০ জনের। আর দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের দেড় লাখ সদস্য। অন্যদিকে বন্যা ও ভূমিধসে থাইল্যান্ডে ১৪৫ এবং ফিলিপিন্সে ১৭৪ জনের প্রাণ গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড শ্রীলঙ্কা। এর প্রভাবে বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে বিভিন্ন অঞ্চলে নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। নিখোঁজের সংখ্যাও কম নয়। কেলানি এবং আত্তানাগালু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে শ্রীলঙ্কার পশ্চিম প্রদেশের অবস্থা এখন সবচেয়ে নাজুক। বন্যা ও ভূমিধস কেড়ে নিয়েছে অনেকের সহায় সম্বল।

এ অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগে শ্রীলঙ্কার বহু মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের দেড় লাখ সদস্য। ১৯৫টি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। এখনও অনেক মানুষ নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। আবার অনেকে ভিটা-মাটির মায়ায় ঝুঁকি নিয়েই শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে সড়ক মহাসড়ক ও রেলপথের অনেক জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় এবং ভূমিধসে পারিবহন যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় বাড়ছে দুর্ভোগ।

মহাসড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী বিমল রথনায়েকে বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি। এর কারণ হিসেবে রয়েছে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়।’

এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে নাজেহাল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ড। ১৫০ প্রাণহানির মধ্যে সোংখলা প্রদেশেই মৃতের সংখ্যা শতাধিক রেকর্ড করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১২টি প্রদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

সারা দেশে ১২ লাখেরও বেশি পরিবারের ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অনেক জায়গায় বন্যার পানি নেমে গেলেও, জমে থাকা কাদা বাসিন্দাদের ফেলেছে ভোগান্তিতে। খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে বহু মানুষকে।

আরও পড়ুন:

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমি আমার ঘরের মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলাম। পানি নেমে গেলেও প্রচুর কাদা জমে থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আরেকজন বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। এটি আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। বড় নৌকাগুলো সরু গলিতে প্রবেশ করতে না পারায় ঠিকমতো উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে।’

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপে চলতি সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দেড়শ ছাড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ অর্ধশতাধিক। কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনও চলছে উদ্ধার অভিযান। হেলিকপ্টার, নৌকা এবং ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। তবে ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, অনেক জায়গার বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। জানিয়েছেন শোক ও সমবেদনাও।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেন, ‘সরকার দুর্যোগের প্রথম দিন থেকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্থল ও বিমান পরিবহনের মাধ্যমে সাহায্য পাঠানোর কাজ করছি। ভূমিধসে স্থলভাগের পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায় অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।’

এদিকে বন্যার কবলে মালয়েশিয়া ও ফিলিপিন্সেরও। তলিয়ে গেছে মালয়েশিয়ার পার্লিস ও কেদাহ রাজ্যের কয়েক হেক্টর ফসলি জমি।

সেজু