বয়সের ভারে নুয়ে পড়া হাবিয়া খাতুন জানান, 'আমার সব নদীতে বিলীন। আমরা কেউ নেই। কিভাবে থাকবো আমি।' স্বামী-সন্তানহীন হাবিয়ার বসতভিটা দু'বার কেড়ে নিয়েছে আগ্রাসী কহুয়া নদী। সব হারিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে ছোট একটি ঘর তুলে তার বসবাস।
কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবারও আগ্রাসী কহুয়া। আঘাত হেনেছে তার বাড়ির এক পাশের আঙিনায়। বেঁচে থাকার সহায়-সম্বলটুকু হারানোর শঙ্কায় কাটছে তার দিন।
ফেনীর উত্তরের দুই উপজেলা ফুলগাজী ও পরশুরামের লাখো পরিবারের জন্য দুঃখ বয়ে আনে এই নদী। ভারি বৃষ্টি হলেই বাঁধ ভেঙে জনপদে ঢোকে পানি। ডুবে যায় বসতি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। স্থানীয়রা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদের অনিয়মের কারণেই প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে এমন নিত্য দুর্ভোগের শিকার তারা।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'বর্ষাকাল আসলেই বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় বিভিন্ন স্থানে ভেঙে লোকালয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
ফেনীর ফুলগাজীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, 'এখানে যেটা দেখতে পেয়েছি বেড়ি বাঁধে লিকেজ হওয়ার কারণে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। আমরা সেটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।'
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, টেকসই বাঁধ ও নদী ড্রেজিংসহ বন্যা প্রতিরোধে ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষার কাজও শেষের দিকে। আগামী ডিসেম্বরে প্রস্তাবটি একনেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
ফেনী-১ সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, 'জুনের মধ্যে সমীক্ষা শেষ হবে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবটি একনেকে অনুমোদন পাবে।'
বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর উপর ১৩৭ কোটি টাকায় ১২২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১১ সালে। বাঁধ নির্মাণের পরের কয়েক বছর এলাকা বন্যামুক্ত থাকলেও ২০১৩ সালে আকস্মিক ভাঙন দেখা দেয়। পরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙন কবলিত অংশ মেরামত করা হলেও প্রতিবছর ভাঙে বাঁধের বিভিন্ন স্থান।