যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনায় আমন্ত্রণ না পেলেও বুধবারই সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল তুরস্ক সফররত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয় সফর, নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১০ মার্চ রিয়াদে যাবেন তিনি।
ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার বিরুদ্ধে বারবারই সোচ্চার জেলেনস্কি। গেলো কয়েকদিনে হতাশা চেপে রাখার জোর চেষ্টা চালালেও মঙ্গলবার তুরস্ক সফরকালেই ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। বলেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার ইচ্ছেরই প্রতিফলনই ঘটছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'আলোচনা যেকোনো বিষয়ে হতেই পারে। কিন্তু ইউক্রেনে যুদ্ধের ইতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে ছাড়া নেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া যুদ্ধে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমাদের পাশাপাশি অনেককেই অবাক করেছে বিষয়টি। যুদ্ধে ইতি টানার সদিচ্ছা যদি সত্যিই থাকে, আমার মনে হয় না পুতিন অন্তত এটা চায়, তাহলে সবার আগে বন্দিবিনিময় হবে। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের কয়েকটি দেশ আমাদের ন্যাটো অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করে না। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ীই সবকিছু আসলে ঘটছে।'
জেলেনস্কির এ বক্তব্যে চটেছেন ট্রাম্পও। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার আলোচনার প্রথম ধাপ শেষে, যুদ্ধ শুরু এবং তা দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকেই দোষারোপ করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, 'আমি খুবই হতাশ। শুনেছি যে বৈঠকে বসতে না পেরে ইউক্রেন ক্ষুব্ধ। গেলো তিন বছর আর তার আগে আরও দীর্ঘ সময়ে তো তারা বসেছে। চাইলেই খুব সহজে সব সমস্যার সমাধান করা যেতো। এতো অঞ্চল, এতো শহর আর এতো প্রাণহানি ছাড়াই বহু বছর আগে কারো সাহায্য না নিয়েও সংকট সমাধান করতে পারতো তারা।'
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চলতি মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনার কথাও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আহ্বান জানান ইউক্রেনে নির্বাচন দেয়ার। রাশিয়ার সাথে বৈঠকে ইউরোপের নেতাদের বাদ দেয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেন তাদের শান্তিরক্ষী পাঠানোর মনোভাবকে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও সুইডেন ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। জবাবে কোনোভাবেই প্রতিবেশী দেশে ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতি মেনে নেবে না বলে সাফ জানিয়েছে রাশিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপকে এক হতেই হবে বলে জানিয়েছে জার্মানি।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের মধ্যে নিরাপত্তা ও সম্পৃক্ততার প্রশ্নে কোনো বিভক্তি থাকা চলবে না। প্রথম পদক্ষেপ বাদ দিয়ে চার নম্বর ধাপে গেলেও সংকট সমাধান সম্ভব নয়। সবার আগে রাশিয়াকে বুঝতে হবে যে দেশটি চাইলেই এভাবে আগ্রাসী যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া অব্যাহত রাখতে পারে না।'
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযানের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী সপ্তাহেই। এতোদিন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসলেও শান্তিরক্ষী পাঠালে এর মাধ্যমে ইউরোপ সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, যা বিশ্বকে ঠেলে দেবে এক নতুন অনিশ্চয়তার দিকে।