২০২৪ এর নির্বাচনে জয়ের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সবার আগে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ডয়েচ ভেলের প্রতিবেদন বলছে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ইসরাইলের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে একযোগে কাজ করার পরিকল্পনা করেন এই দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে ইসরাইলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করেন নেতানিয়াহু। টাইমস অব ইসরাইলের দাবি, বাইডেন প্রশাসনের সাথে তেল আবিবের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন এই ইয়োভ গ্যালান্ত।
ট্রাম্পের শপথ নেয়ার একদিন আগে ১৯ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন বাইডেন প্রশাসনের নেতৃত্বে গাজায় অস্ত্র বিরতি কার্যকর হয়। যদিও মার্কিন গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করে ট্রাম্প এফেক্টের কারণে ৮ মাস ধরে ঝুলে থাকা আলোচনা, সাফল্যের মুখ দেখেছে।
এবার, যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে ১০ লাখেরও বেশি আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিকে জর্ডান ও মিশরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই দিনে জো বাইডেনের স্থগিত করা আদেশ পুনর্বহাল করে ২ হাজার পাউন্ডের বোমা পাঠাচ্ছেন ইসরাইলে। এ ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠছে আদৌতে কী চাইছেন নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট?
বার্তা সংস্থা এপি'র বিশ্লেষণ বলছে, শুরু থেকেই এটা পরিষ্কার, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সমন্বয় করে চলছেন নেতানিয়াহু। একইভাবে, গাজায় অস্ত্র বিরতি কার্যকরে ইসরাইলকে চটাতে বা হাতছাড়া করছে চাইছেন না ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, যে কোনো মূল্যে গাজায় অস্ত্র বিরতি কার্যকরের ম্যানডেট নিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন তিনি, তাই, প্রয়োজনে নেতানিয়াহুকেও চাপ দিতে কুণ্ঠা বোধ করবেন না।
এপির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রতিবেদক ড্যান পেরি বলেন, ‘ট্রাম্প যখন কোনো কিছু করবেন বলে মনস্থির করেন, এর পরিণতি নিয়ে তিনি ভাবেন না। এর অর্থ, সম্ভাব্য যে কোনো উপায়ে স্বার্থ হাসিল করাই তার লক্ষ্য। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব নিতে চান ট্রাম্প। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোন পথ বেছে নেয়া হচ্ছে- এসব নিয়ে তিনি মাথা ঘামাবেন না।’
বিশ্লেষকরা আরো দাবি করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থও। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হলে সৌদি সরকারের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করতে পারবেন না ট্রাম্প।
আরব সেন্টার- ওয়াশিংটন ডিসির তথ্য বলছে, নয়া প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের আগে আগামী ৪ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এমন প্রেক্ষাপটে, দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবেই যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
এছাড়া, নিজ ভূখণ্ডে তেল-গ্যাস উত্তোলন ছাড়াও সিরিয়ার ভেতর দিয়ে কাতারের গ্যাস ইউরোপে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা আছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এতে করে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসের বাজার ধরতে পারবে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে যে কোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে হবে ট্রাম্পকে।
যদিও ইরানের সাথে চূড়ান্ত বৈরিতার ঘোষণা দিয়ে, কোন উপায়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাবেন ট্রাম্প কিংবা তেহরানের অক্ষশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে কীভাবে ব্যবহার করবেন নেতানিয়াহুকে-সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।