গাজায় আগ্রাসন: যুদ্ধ সচল রেখেছে উপসাগরীয় দেশগুলো?

উপসাগরীয় দেশসমূহের পতাকা ও যুদ্ধে ব্যবহৃত মেশিন | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় ইসরাইলের চলমান আগ্রাসনে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নীরবতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুললেও, এতে মোটেও অবাক নন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। গাজা সংকট ও ফিলিস্তিনিদের মুক্তির প্রশ্নে বরাবরই এই দেশগুলো অনেক দূরে। উল্টো তেল আবিবের সঙ্গে রেখে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে তারা। মূলত দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধের মেশিনকে সচল রেখেছে এই পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোই। শুধু তাই নয়, পরোক্ষভাবে গাজায় গণহত্যা চালাতেও সহযোগিতা করছে তারা।

২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে একবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, সৌদি আরবকে ছাড়া কঠিন সমস্যায় পড়ে যাবে ইসরাইল। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, আরব নেতারা ইসরাইলকে শত্রু হিসেবে নয়, মিত্র হিসেবে দেখে। তারা চায়, হামাসকে যেন ইসরাইল পরাজিত করে। কিন্তু গাজায় মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানোর মতো এতো আত্মবিশ্বাস ইসরাইল পেলো কোথা থেকে?

এশিয়াভিত্তিক অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন 'দ্যা ক্র্যাডেল' এ উঠে এসেছে নেপথ্যের সব তথ্য। বহু বছর ধরে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো প্রত্যক্ষভাবে মদদ না দিলেও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত আর বাহরাইন জোর দেয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আব্রাহাম অ্যাকর্ডে। সৌদি আরব আর কাতারের ভূমিকাও দৃশ্যমান ইসরাইলের সঙ্গে মধ্যস্থতায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, পরোক্ষভাবে ইসরাইলের যুদ্ধের মেশিন সচল রেখেছে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোই।

ফিলিস্তিনের জন্য আরব বিশ্বের বাঁধভাঙা সমর্থন আর ইসরাইলি পণ্য বয়কটের ডাকের মধ্যে পারস্য উপসাগর আর ইসরাইলের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত। গাজায় যুদ্ধের ১০ মাসে তেল আবিবের সঙ্গে সাড়ে ৯শ' শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্য। বয়কটের মধ্যেই আরব দেশগুলোর পণ্য যাচ্ছে ইসরাইলে। দখলদার ইসরাইলে প্লাস্টিক পণ্য পাঠাচ্ছে কাতার। অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে তৈরি পণ্য স্বীকৃতি দিয়েছে বাহরাইন।

ইসরাইলের স্থাপনা আরও বাড়ছে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর বিনিয়োগে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাতা জারেড কুশনারের ফার্ম অ্যাফিনিটি পার্টনার্সে বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত আর কাতার। যেই অর্থ যাচ্ছে ফিনিক্স হোল্ডিংসে। এই প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইলি স্থাপনা নির্মাণে অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইয়েমেন যখন লোহিত সাগরে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট কার্গোগুলোতে হামলা করছিল, তেল আবিবের খাদ্য আমদানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। সেসময় পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোই মধ্যস্থতায় উঠে পড়ে লাগে। সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি করিডোর তৈরি করে সৌদি আরব, জর্ডান হয়ে দুবাই থেকে তেল আবিব পর্যন্ত। বাহরাইন দেশের বন্দরগুলোকে বিকল্প শিপিং হাব হিসেবে ব্যবহার করে যেন ইসরাইলি পণ্য আসতে পারে।

এ তো গেলো আমদানি-রপ্তানি। সামরিক খাতেও ইসরাইলকে সহযোগিতায় কোনদিক থেকে পিছিয়ে নেই পার্শিয়ান গাল্ফের দেশগুলো। গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দখলদার ইসরাইলের সামরিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। আরব আমিরাত সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ইসরাইলে রপ্তানি করেছে ১ কোটি ৭১ লাখ ডলারের সমরাস্ত্র। যা দিয়ে গাজায় হামলা হয়েছে।

বিশ্বাসঘাতকতার রয়েছে আরও চিত্র। আরব আমিরাতের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইডিজিই'র সঙ্গে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান রাফায়েল আর ইসরাইল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রির সামরিক চুক্তিও হয়েছে। আবুধাবি ইসরাইলি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বায়ে সিস্টেমস আর থার্ড আই সিস্টেমসকে স্বাগত জানিয়েছে সামরিক প্রদর্শনীতে। প্রত্যক্ষভাবে স্বাভাবিক না থাকলেও ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক সখ্যতা রয়েছে সৌদি আরবেরও। মার্কিন ইলবিত সিস্টেমস থেকে ইসরাইলের তৈরি মিসাইল সিস্টেম কিনছে সৌদি আরব।

ইসরাইলে সমরাস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতেও কাজ করছে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো। ইসরাইলকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার মিসাইল, বোমা আর আয়রন ডোম গাল্ফের আকাশসীমা ও ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করছে।

এছাড়াও দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনা সদস্যদের অবসর সময় কাটানোর জন্য নানা ধরনের সেবা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরোক্ষভাবে কিংবা প্রত্যক্ষভাবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে বরাবরই অংশগ্রহণ ছিল পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর। যেই সংঘাতে চরম বর্বরতার শিকার হচ্ছে ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষ। এই পারস্য উপসাগরীয় দেশের তালিকায় রয়েছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমান আর বাহরাইন। তবে ইরান আর ইরাক পারস্য উপসাগরীয় সীমান্তে থাকলেও গাল্ফ করপোরেশন কাউন্সিলের সদস্য না।

এসএস