দায়িত্বে আসার পর ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা দেয়া নিয়ে গড়িমসি করলেও ইসরাইলকে সমরাস্ত্র দিতে একেবারেই কার্পণ্য করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলশ্রুতিতে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যেতে ইসরাইলের অস্ত্রের অভাব হয়নি, যেমনটা দেশ রক্ষায় ইউক্রেনের হচ্ছে। হোয়াইট হাউজের মসনদে বসার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ইসরাইলের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে বারবার চাপ দেয়ার পরও কোনোভাবেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হচ্ছেন না ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিবি। এতে করে দুই নেতার মধ্যে বৈরিতা পৌঁছেছে চরমে, যা স্পষ্ট হয়েছে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্য দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে গাজা নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হলেও আসেনি কোন সমাধান। উল্টো ইসরাইল আর নেতানিয়াহুকে এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। সফরসূচি থেকে বাদ দেন তেল আবিবের নাম।
সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বর্জন করবে, এমন ইঙ্গিত বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে দিতে চান খোদ ট্রাম্প। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করে হোয়াইট হাউজ বলছে, ইসরাইলকে বর্জন করছে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানায়, ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ভালো বন্ধু ইসরাইলের আর নেই। বন্দি বিনিময়, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা আর ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে এখনও একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ওয়াশিংটন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেলো সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরই প্রমাণ করে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙছে যুক্তরাষ্ট্রের। উত্তরসূরিদের মতো করে পশ্চিমা দেশগুলোতে আগে সফরে যাননি তিনি। গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের আরব বন্ধুদের গুরুত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। যেখানে নেই ইসরাইল। কয়েক দশকে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনে সজ্ঞানেই মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন ট্রাম্প।
এই সফরে ট্রাম্প ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করলেও সাবধানতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে। এমনকি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের তেল আবিব সফরের কথা থাকলেও, তাও হঠাৎ বাতিল করেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প আর নেতানিয়াহুর সম্পর্কে যে চির ধরছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। তারপরও হুতিদের ওপর হামলা বন্ধ, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আগ্রহ, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান আহমদেরে আল শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ, সবমিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরাইলের কোন শত্রুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে আর বাধ্য করতে পারছেন না নেতানিয়াহু।
ইসরাইলকে আরও অবাক করেছে, গাজায় নতুন উদ্যমে আগ্রাসনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উপায় খুঁজছেন ট্রাম্প। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন ইসরাইলি এক বন্দি বিনিময়ের জন্য তেল আবিবকে ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগাযোগ করে হামাসের সঙ্গে। ফিলিস্তিনকে আলাদা রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, এমন জল্পনা-কল্পনাও তৈরি হয়েছে। যা পরিবর্তন আনবে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে। ওয়াশিংটন যদি এই পথ ধরে এগোতে থাকে, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত আর তুরস্কের মতো দেশ ইসরাইলকে কোণঠাসা করে দেবে। যদি ফিলিস্তিনকে আলাদা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়, শুধু কয়েক দশক পুরনো সংঘাত শেষ হবে না, সেইসঙ্গে শেষ হবে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্ব, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।





